জনবল সংকটে চালু হচ্ছে না ১০ শয্যার আইসিইউ

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জাহিদ হাসান
হাসপাতালের প্রধান ফটক
প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যন্ত্রাংশ থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ঢাকা ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু হচ্ছে না। ফলে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি দন্ত চিকিৎসাকেন্দ্রটিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের অস্ত্রোপচার পরবর্তী জরুরি আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলেও সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। সরেজমিন রাজধানী মিরপুরের ১৪ নং সেক্টরে অবস্থিত সরকারি ঢাকা ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসাকেন্দ্রটির একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও রোগীরা বলছেন, দন্ত চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানটি চালুর দেড় যুগেরও বেশি সময় পার হয়েছে। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের তাৎক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও সেটি চালু না থাকায় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে ঝুঁকি না নিয়ে উচ্চমূল্যের বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়ে আর্থিকভাবে বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। গত সপ্তাহে দাঁতের প্রদাহের তীব্র ব্যথা নিয়ে এই হাসপতালে ভর্তি হন আয়েশা বেগম (৫৩) নামের এক রোগী। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আইসিইউ'র প্রয়োজন হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানান। তবে হাসপাতালে এ সুবিধা না থাকায় ওই রোগী অন্যত্র যেতে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, শুধু আয়শা বেগমই নন তার মতো আরও অনেক রোগী আসে যাদের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেবা ব্যবস্থাটি না থাকায় নিরুপায় রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান। আবার হাসপাতালের প্রথম থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বহির্বিভাগ ছাড়াও ষষ্ঠ ও সপ্তম তলার আন্তবিভাগে দুই'শ বিছানায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যাদের সেবায় চিকিৎসক, নার্স, প্যাথলজিস্ট, ল্যাব টেকনেশিয়ান, আয়া-ওয়ার্ডবয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ৫০০ লোকবলের প্রয়োজন। কিন্তু সব মিলে কাজ করছেন ২৮৪ জন। এছাড়া টেকনিশিয়ান সংকটে এক্স-রে ও প্যাথলজি বিভাগে কর্মরতদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, ২০১১ সালে ২০ শয্যার হাসপাতালটি দুইশ বেডে উন্নীত করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ১০ বেডের আইসিইউ অবকাঠামো স্থাপন করা হয়। যেটি ২০১৫ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম দ্রম্নত চালুর আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ৫ বছর পার হলেও শুধু জনবল সংকটের কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অথচ হাসপতালটিতে দাঁতের চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগে ১০০টি শয্যা রয়েছে। যেখানে অসংখ্য রোগীর ছোট-বড় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হচ্ছে। নাম না প্রকাশের শর্তে সার্জারি বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালের সাতটি অপারেশন থিয়েটারে সপ্তাহে অন্তত ১৬টি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের রোগীদের বিভিন্ন সময় জরুরি আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়। এজন্য ১০ শয্যাবিশিষ্ট অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন দামি মেশিনগুলো অকেজো পড়ে থাকায় কার্যকারিতা হ্রাস পাচ্ছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক লাইলী আক্তার যায়যায়দিনকে বলেন, এখানে মেডিসিন ৫০, সার্জারি ৫০ ও ডেন্টাল শাখার জন্য ১০০টি বেডসহ ২০০ শয্যা রয়েছে। কিন্তু জুরুরি বিভাগ না থাকায় দুপুর আড়াইটার পর রোগী ভর্তি সম্ভব হচ্ছে না। তবে রোগীরা যেন বিনা চিকিৎসায় ফিরে না যায় সেজন্য হাসপাতালের অন্যান্য মেডিকেল অফিসারদের নিয়ে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে হলেও নিজ উদ্যোগে জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। লোকবল সংকটসহ হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিতিভাবে জানানো হয়েছে। সবশেষে বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ১২শ' থেকে ১৪শ' রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। যাদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীসহ অন্যান্য রোগীদের জটিল অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। তবে এনেসথেশিওলজিস্ট অভাবে অনেক কাজ সম্ভব হচ্ছে না। আবার জরুরি বিভাগ না থাকায় রোগীরা ফিরে যান। রোগীদের স্বার্থে চিকিৎসকদের উদ্যোগে বিদ্যমান জনবল নিয়েই জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি মাসে অস্ত্রোপচার সংখ্যা ও আইসিইউ সেবা প্রয়োজন সে অনুপাতে প্রেষণে হলেও ১০ জন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ১০ জন মেডিকেল অফিসার, আইসিইউ'র উপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফার), ওয়ার্ড বয় ও সুইপার চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থায়ী জনবল পূরণে ২ জন করে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেশিয়া), ৮ জন অ্যানেসথিওলজিস্ট এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক আয়া ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আর জরুরি বিভাগ চালু করতে ৩ জন আবাসিক ডেন্টাল সার্জন, ২ জন আবাসিক সার্জন, দশজন ইমার্জেন্সি ডেন্টাল সার্জন, দশজন ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য সহায়ক জনবলের পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।