ক্যাসিনো কান্ড

এনামুল-রূপনের ২২ জমি-বাড়ি অ্যাকাউন্টে ১৯ কোটি টাকা

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সিআইডির হাতে আটক এনামুল ও রূপন। ছবিটি সোমবার সিআইডির সদর দপ্তর থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
দেশে ক্যাসিনো কারবার চালুর পেছনের হোতা তারা দুই ভাই। নেপালিদের মাধ্যমে দুই ভাই বিদেশ থেকে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। তারপর তা ছড়িয়ে দেয়া হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এই কারবারে দুই ভাই 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' হয়ে ওঠেন। গত বছরের শেষদিকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ক্ষমতাসীন বলয়ে থাকা অনেক রাঘব-বোয়ালও ধরা পড়ে। কিন্তু তারা দুই ভাই থেকে যাচ্ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে তাদের ধরা পড়তেই হলো। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে আটকা পড়লেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। সোমবার সকালে তাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুইজনকে নিয়ে দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বিস্তারিত তুলে ধরেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ। সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া অভিযানে ক্যাসিনোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও অর্থ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে যে নয়টি মামলা হয়, সেগুলো তদন্তের ভার সিআইডির কাছে আসে। নয়টির মধ্যে চারটি মামলার এজাহারেই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার নাম দেখা যায়। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করি এবং সকালে কেরানীগঞ্জে তাদের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিআইডির তদন্তেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাইয়ের সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। এছাড়া সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও রয়েছে দুই ভাইয়ের। সেপ্টেম্বরে দু'জনের বাড়িতে অভিযানের সময় ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো বস্ন্যাকমানি (কালো টাকা)। দেশের বাইরে পাচার করতে তারা সেগুলো রেখেছিলেন। রিমান্ডে নিয়ে দুই ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করেন ইমতিয়াজ আহমেদ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়, তারা তা আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- নৌযানে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাবেন। তবে ওই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দু'জন নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করেন। সেখান থেকে বেনামী পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন দুই ভাই। বেনামী পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সাথে রেখেছিলেন তারা। তাদের গ্রেপ্তারের সময় এই ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা জেনেছি এই দুজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ক্যাসিনো কারবারের গোড়াপত্তন হয়। নেপালিদের মাধ্যমে তারা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছে। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের পরিচালক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ সেপ্টেম্বর এনামুলের শেয়ার থাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়র্ যাব। অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগের্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ২০ সেপ্টেম্বর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। সেদিন রাতে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে। ২২ সেপ্টেম্বর আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর অভিযান চলে ফু-ওয়াং, পিয়াসী ও ড্রাগন বারে। এসব অভিযানে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়।