অভয়নগরে গণপিটুনিতে তিন গোরুচোর নিহত

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অভয়নগর (যশোর) সংবাদদাতা যশোরের অভয়নগরে তিনজন গরু চোর গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। চার গরু চোর চক্রের সদস্য জনি শেখকে আটক করা হয়েছে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে বইছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। সোমবার ভোর রাতে যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছী গ্রামে গরু চুরির ঘটনা ঘটে এবং গণপিটুনিতে নিহত হয় অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্রেমবাগ গ্রামে। এ ঘটনায় অভয়নগর থানায় পৃথক দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। আটক জনি শেখ বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট কাটাখালী গ্রামের ওহাব শেখের ছেলে। নিহত সোহেল, শওকত ও অজ্ঞাত একজনও একই গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন যশোর জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন ও অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। লাশ উদ্ধার ও আটক পিকআপ চালককে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে গাইদগাছী গ্রামের খোরশেদ আলী জানান, সোমবার গভীর রাতে গোয়াল ঘরের তালা ভাঙার শব্দ ও গরুর ডাক শুনে ঘর থেকে বের হই। গোয়াল ঘরের দরজার উপরে চক দেয়া লেখা 'গোয়াল আপনার গোরু আমাদের।' ওই সময় তিনি গোরু চুরির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে প্রেমবাগ বাজারে থাকা তার ভাগ্নেকে মোবাইলে জানান এবং স্থানীয় মসজিদের মাইকে গোরু চুরির বিষয়টি প্রচার করে। এলাকাবাসী জানায়, মাইকে গরু চুরির খবর প্রচার হওয়ায় গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় একটি পিকআপ ও চুরি হওয়া গোরুসহ তিন চোরকে ধরে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই গোরু চোরের মৃতু্য হয়। অপর একজনকে আহত অবস্থায় অভয়নগর থানা পুলিশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত লোকটির মৃতু্য হয়। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে প্রেমবাগ মাছ বাজার থেকে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট কাটাখালী গ্রামের ওহাব শেখের ছেলে চোর চক্রের সদস্য পিকআপ ভ্যান চালক জনি শেখকে আটক করা হয়েছে। সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে দেখা যায়, গাইদগাছী গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে খোরশেদ আলীর বাড়ির গোয়াল ঘরের দরজার উপরে চক দেয়া লেখা আছে 'গোয়াল আপনার গরু আমাদের।' এসময় বাড়ির লোকজন জানান, চোরেরা গরু চুরির পর এ কথাটি লিখেছে। পরে উপজেলার প্রেমবাগ বাজারে অসলে দেখা যায়, বাজারসংলগ্ন রেল লাইনের পাশে দুটি লাশ পড়ে আছে। উপস্থিত জনতা জানায়, লাশ দুটি গরু চোরের। তারা গণপিটুনিতে মারা গেছে। আটক জনি শেখকে প্রেমবাগ বাজার মসজিদের পাশে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা আছে। এসময় গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, গত এক মাসে তাদের প্রেমবাগ, পুড়াটাল, বনগ্রাম, মাগুরা ও যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছী গ্রামের প্রায় শতাধিক গরু চুরি হয়েছে। যে কারণে তারা রাতে দলবদ্ধভাবে পাহারার ব্যবস্থা করেন। এ ব্যাপারে প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান, গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজন ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং আহত একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেয়া হলে তার মৃতু্য হয়। পরে প্রেমবাগ বাজার থেকে জনি শেখ নামের অপর এক চোরকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, আটক জনি শেখের জবানবন্দি মোতাবেক সোমবার গভীর রাতে যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছী গ্রাম থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে করে কয়েকটি গরু চুরি করে অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের সিমান্তের গ্রামে প্রবেশ করে। এসময় গ্রামবাসী তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং গণপিটুনি দিতে শুরু করে। ওসি আরো বলেন, গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে দুইজন এবং অপর একজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত তিনজনের মধ্যে দুই জনের পরিচয় জানা গেছে। জেলা পুলিশ সুপারসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আইন মোতাবেক একটি হত্যা মামলা ও একটি চুরি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। আইন হাতে তুলে নেওয়া কারোর উচিত নয়। তদন্তপূর্বক পৃথক দুটি ঘটনার আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।