ভিন্নমত পোষণ করলেই নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়: ফখরুল

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান মিঞার স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন -পিবিএ
দেশে আজ কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান মিঞার স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, 'যে চিন্তা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি ১৯৭১ সালে, সেই চিন্তা-চেতনা, সেই ধারণাগুলো সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজকে যারা শাসকগোষ্ঠী, তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে।' ভিন্নমতের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে দুঃখ হয় যখন দেখি যে, আমাদের গুণী মানুষ যারা রয়েছেন তাদের শুধু কথা বলার কারণে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও তারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না।' তিনি বলেন, 'যারা লেখেন, কথা বলেন বা যারা শুভ চিন্তা ও সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে চান তাদেরও এখন একইভাবে পর্যুদস্ত করা হচ্ছে, নিপীড়ন করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে।' সদ্য প্রয়াত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনিরুজ্জামান তালুকদার স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর এ্যাপেলো হাসপাতালে মারা যান তালুকদার মনিরুজ্জামান। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ফখরুল সম্প্রতি প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির উদাহরণ টানেন। মোহাম্মদপুরে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গত ১ নভেম্বর বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র আবরার রাহাতের মৃতু্যর ঘটনায় হওয়া মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি এই পরোয়ানা জারি করে আদালত। মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান সাহেব। আপরাধ কী? অপরাধ যে মাঝে মাঝে তিনি কিছু লিখতেন, তার পত্রিকায় কিছু সত্য কথা বেরুত। এ জন্য একটি হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে, তাকে প্রধান আসামি করে প্রথম আলোর নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে মাহমুদুর রহমান সাহেবের (দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক) পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাকে দীর্ঘকাল কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। যে-ই ভিন্নমত পোষণ করতে চায়, ভিন্ন কথা বলতে চায়, এখন তাকে নিশ্চিহ্ন করা, নির্মূল করা অথবা স্তব্ধ করে দেওয়ার কাজ চলছে।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'এর মধ্যে উঠে দাঁড়াতে হবে, এর মধ্যেই তো কথা বলতে হবে। প্রফেসর তালুকাদার মনিরুজ্জামান সাহেব সেই কথাটি আমাদের শিখিয়েছেন, পড়িয়েছেন যে লড়াই করে যাওয়া, সংগ্রাম করে যাওয়া। অবশ্যই আমরা জয়ী হব। এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেই জয়ী হয়েছে।' তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, 'বাংলাদেশে আদর্শ শিক্ষক বলতে যা বোঝায় তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন তা। গবেষণাকর্মে তিনি সবসময় সম্পৃক্ত ছিলেন কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের পেছনে দৌড়াননি, তিনি প্রক্টর হতে চাননি। তিনি হয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক, এই অধ্যাপনাই ছিল তার নেশা, তার পেশা এবং আমি মনে করি যে, বাংলাদেশের শিক্ষকরা যদি তালুকদার মনিরুজ্জামানকে অনুসরণ করে তাহলে শিক্ষাব্যবস্থায় আরও অনেক উন্নতি হওয়ার সম্ভব।' আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউলস্নাহ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুলস্নাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন হ এহছানুল হক মিলন প্রমুখ তালুকদার মনিরুজ্জামানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও আলোচনা সভায় অংশ নেন।