চলন্তিকা বস্তিতে আগুন

পুড়ে যাওয়া স্কুলে বই-পেন্সিল খুঁজছে শিশুরা

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা -যাযাদি
ছয় মাসের ব্যবধানে আবারো পুড়ল রাজধানীর মিরপুরের চলন্তিকা বস্তি। ভোরে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে দেড় শতাধিক ঘর। আহত হয়েছেন রাবেয়া নামে এক নারী। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদ করতেই বার বার আগুন লাগানো হচ্ছে বস্তিতে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের দাবি বস্তিবাসীর অসচেতনতাতেই অগ্নিকান্ড। একদিন আগেও যে স্কুলটিতে তারা দলবেঁধে শিক্ষার আলো নিতে আসতো আজ তা ধ্বংসস্তূপ। আর তাদের বইগুলোও পুড়ে ছাই। তাতেও দমে যায়নি চলন্তিকা বস্তির হতভাগ্য এই শিশুরা। ধ্বংসস্তূপ থেকে অর্ধেক পোড়া বই, খাতা আর পেন্সিল সংগ্রহে মনোযোগ তাদের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আগে স্কুল ছিল, এখন নেই। আগে স্কুলে আসতাম, পড়তাম, ভালো লাগত। আর বড়দের দুশ্চিন্তা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের বন্দোবস্ত নিয়ে। শুক্রবার ভোর সোয়া ৪টায় হঠাৎ লাগা আগুনে পুড়ে গেছে হাজারো বস্তিবাসীর সহায়-সম্বল। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও, ততক্ষণে হতদরিদ্র মানুষগুলো হারিয়েছে তাদের সর্বস্ব। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠছি, দেখি আগুন লাগছে কোনও রকম জানটা নিয়ে বের হয়েছি। গত বছরের ১৬ আগস্টও আগুনের সাক্ষী হয়েছিলো চলন্তিকা। বিভীষিকাময় সেই সময় প্রায় ৩ হাজার বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বার বার বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ জায়গা খালি করতেই এমন অপচেষ্টা। তবে বস্তিবাসীর এ অভিযোগ নাকচ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। বললেন বাসিন্দাদের অসচেতনতাই দায়ী অগ্নিকান্ডের জন্য। ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোলস্নাহ বলেন, বস্তিবাসীরা সচেতন না। তারা সচেতন হলে এই অগ্নিকান্ড হতো না। তাদের একটা মাঠ রেখেছিলাম। আজ গিয়ে দেখি কোনও কিছু রাখেনি। এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন এদিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার শুল্কবহর এলাকায় শুক্রবার সকালে একটি বস্তিতে আগুন লেগে শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি গাড়ি দুপুরের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হতাহতের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের পাইপ দিয়ে বাবু কলোনিতে পানি ছিটানো হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনও আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। বস্তির আশপাশে থাকা টিনশেড ঘরগুলোতে যাতে আগুন না লাগে, এ জন্য তিনটি উঁচু ভবন থেকেও পানি ছিটানো হয়। ঘটনাস্থলে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় ডেকোরেশন গলির শেষ মাথায় বাবু কলোনিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট এক থেকে দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব তারা বের করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান। ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কলোনিতে ঢোকার সড়ক সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিতে খুব বেগ পেতে হয়েছে। আবার পানির সহজ উৎসও ছিল না। টিনশেড কাঁচাঘর হওয়ায় আগুন দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, আগুনে ঘরের সব জিনিস হারিয়ে কলোনির বাসিন্দাদের আহাজারি করতে। বেবী বেগম নামে কলোনির এক বাসিন্দা বলেন, 'আগুন আগুন' বলে চিৎকার শুনে দেখি, কলোনির লাকীর ঘরে দাউ দাউ করে জ্বলছে। এরপরই নয় বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে দ্রম্নত বাইরে চলে আসি। ঘরের সব জিনিস পুড়ে গেছে বলে তিনি জানান। অটোরিকশাচালক আবুল কালাম আজাদ ভোরে অটোরিকশা নিয়ে বের হন। আগুন লাগার সময় তিনি গলির মুখে আসেন। তিনি জানান, বাবু কলোনিতে পাঁচজনের নামে পাঁচ সারিতে টিনশেড ঘরগুলো ছিল। 'তিনি বলেন, আগুনের খবর শুনে দৌড়ে যাই। তবে মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। ঘরের সব জিনিস পুড়ে গেছে।'