চাকরি হারানোয় চালকসহ দুইজনকে হত্যা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চাকরি হারানোয় ট্রাকের নতুন চালক জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজুকে হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায় ট্রাক থেকে সদ্য চাকরি হারানো চালক ইব্রাহিম (২৩) ও তার সহকারী ফজর মিয়া (২৪)। হত্যার পর ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল তারা। পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ট্রাকটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচক সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড়ের পাশে রেখে আসে। যেখানে দুর্গন্ধের জন্য কোনো গাড়ি থামে না বরং দ্রম্নত প্রস্থান করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের এমন তথ্য দেন আটকরা। শনিবার ভোরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে ইব্রাহিমকে আটক করে এসএমপির মোগলাবাজার থানা পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে আম্বরখানা থেকে আটক করা হয় তার সহযোগী ফজর আলীকে। আটক মো. ইব্রাহিম তালুকদার সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকার ফউজদার তালুকদারের ছেলে এবং ফজর মিয়া বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তুম আলীর ছেলে। তাদের দেওয়া বর্ণনা মতে, পুলিশ ফজরের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিহতদের লুণ্ঠিত মোবাইল সেট ও ট্রাকের টায়ার বিক্রির পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করে এবং গাড়ির টায়ার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশ পুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও (২৩) আটক করা হয়। এসএমপির মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখতার হোসেন বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আইলদীপুরের আতাউর রহমান। ইব্রাহিম ট্রাকচালক ও ফজর হেলপার ছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি ট্রাকটি ঢাকায় নিয়ে গেলে ইব্রাহিমকে বাদ দিয়ে নতুন চালক হিসেবে জাহাঙ্গীরকে নিযুক্ত করেন গাড়ির মালিক। জাহাঙ্গীরের বন্ধু ছিলেন রাজু। সে পেশায় কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। পরদিন ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় গাজীপুর থেকে ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় সাবেক চালক ও রাজুও নতুন চালকের সঙ্গী হন। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। আটকদের বরাত দিয়ে ওসি আখতার হোসেন আরও বলেন, হত্যার আগে তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে নিহতদের কাবু করে ফেলে। আর নিহত চালক জাহাঙ্গীরের বন্ধু রাজুও কিছুটা প্রতিবন্ধী টাইপের ছিল। জাহাঙ্গীর গাড়ি নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে আসায় বেড়ানোর জন্য বন্ধুর সঙ্গী হয়ে প্রাণ হারায় রাজুও। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। গাড়িটি মাধবপুরের জগদীশপুর ও আউশকান্দি, সর্বশেষ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে এনে থামায় তারা। এরপর পরিকল্পনা করে মরদেহ দুটি চালক ও হেলপারের সিটে বসিয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচকে রেখে যায়। ঘটনাটি স্রেফ দুর্ঘটনা সাজাতে ট্রাকটি রাস্তার পাশে রেখে খুলে নেওয়া হয় ছয়টি চাকা। এরপর জগদীশপুর জয়নালের দোকানে নিয়ে চাকাগুলো বিক্রি করা হয়। শুক্রবার গাড়ি থেকে উদ্ধার করা নিথর দেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হয়। খবর পেয়ে ট্রাক মালিক আতাউরসহ নিহতদের স্বজনরা মোগলাবাজার থানায় আসেন শনিবার দুপুরে। এ ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন ওসি। শুক্রবার সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জে সড়কে সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় একটি ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪০৩০) চালক ও হেলপারের আসনে রাখা অবস্থায় জাহাঙ্গীর ও রাজুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা বাগদী গ্রামের মো. কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া (২৫) ও দীন মোহাম্মদের ছেলে রাজু আহমদ (২৫)।