আজ একনেকে উঠছে প্রকল্প

আন্তর্জাতিক মানের বন্দর হচ্ছে মোংলা

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মোংলা সমুদ্রবন্দর -ফাইল ছবি
মোংলা বন্দরকে রপ্তানি উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক বন্দরে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমানো হবে। এ জন্য মোংলা বন্দরের জেটিতে ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সাত থেকে সাড়ে সাত মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে এখানে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূর্ব তীরে মোংলা বন্দরের অবস্থান। বঙ্গোপসাগর থেকে চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা 'আউটার বার' এবং জয়মনিরগোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত যা 'ইনার বার' নামে পরিচিত। এই দুটি এলাকায় প্রায় ৩০ কিলোমিটারব্যাপী চ্যানেলে নাব্য ৫-৬ মিটার। এর ফলে নৌপথে পণ্য পরিবহণে বাড়তি সক্ষমতা অর্জনের জন্য ড্রেজিং করা হবে মোংলা বন্দর। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে 'মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং' প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২২ সাল নাগাদ। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কাটার সাকশান ড্রেজারের মাধ্যমে ১৫৮ লাখ ঘনমিটার এবং ট্রেইলিং সাকশান হপার ড্রেজারের মাধ্যমে ৫৮ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে। ২ লাখ ঘনমিটার ডাইক ও ৫০ হাজার ঘনমিটার জিয়োটিউব ডাইক নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া করে, সেগুলো পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। মোংলা বন্দরের আউটার বার ও ইনার বারের নাব্য সংকটের কারণে কন্টেইনারবাহী ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। এ জন্য ড্রেজিং করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক মানের হবে মোংলা বন্দর। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে খালাস হওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল ৪১৬টি, আর কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ২৭৯ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ আসে ৬২৩টি, আর কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৭২৭ টন। বন্দরটিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যেখানে ২৬ হাজার ৯৫২টি কন্টেইনারে পণ্য আমদানি করা হয়, সেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই পণ্য আমদানি হওয়া কন্টেইনারের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। অর্থাৎ বছর বছর বেড়েই চলেছে জাহাজ খালাস আর পণ্য আমদানির কন্টেইনারের সংখ্যা। এসব চাহিদার কথা চিন্তা করেই সুন্দরবন ঘেঁষে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের জন্য প্রথমবারের মতো কেনা হচ্ছে মোবাইল হারবার ক্রেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান (পরিকল্পনা) মো. জহিরুল হক বলেন, 'মোংলা বন্দরে বর্তমানে ৭ থেকে সাড়ে ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। প্রকল্পের মাধ্যমে এটাকে ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটারে রূপ দেয়া হবে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে ঢাকার নিকটবর্তী বন্দর হবে মোংলা। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ফলে ১০-১৫ শতাংশ পরিবহণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বছরে তিন হাজার জাহাজ হ্যান্ডেলিং করতে হবে এখানে। এই জন্য আন্তর্জাতিক মানের রূপ দেয়া হচ্ছে বন্দরকে।