বিধিমালা চূড়ান্ত

পাখি পালনে লাইসেন্স না নিলে জেল-জরিমানা

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খাঁচায় দুলছে দুটি পোষা পাখি -ফাইল ছবি
পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। এমন শাস্তির বিধান রেখে 'পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা- ২০২০' চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত ১৩ জানুয়ারি বিধিমালাটি জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পোষা পাখি ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো খামারি পোষা পাখির উৎপাদন, লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনাবেচা বা আমদানি-রপ্তানি করতে পারবেন না বা কোনো পেট সপ (পোষা পাখি বিক্রির দোকান) পোষা পাখি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। যারা শখের বসে বাড়িতে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পোষা পাখি লালন-পালন করেন, পাখির সংখ্যা ১০টির বেশি নয়, তাদের শৌখিন পোষা পাখি পালনকারী বলা হয়েছে নীতিমালায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. বিলস্নাল হোসেন বলেন, 'পোষা পাখি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখন সবাইকে নীতিমালাটি মানতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এবং কথা বলে এটি করা হয়েছে।' বিধিমালা কার্যকর হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তি পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন বা আমদানি-রপ্তানি বা পেট শপ পরিচালনা করে থাকলে তাকে এ বিধিমালা কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে। বিধিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে লাইসেন্সের মেয়াদ হবে এক বছর। এক বছর পর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স দেবে প্রধান ওয়ার্ডেন (প্রধান বন সংরক্ষক) বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা। নবায়নের জন্য আবেদনপত্র পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ অধঃস্তন কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদনে উলিস্নখিত তথ্যের সঠিকতা যাচাই এবং পাখির সংখ্যা অনুযায়ী স্থান, খাঁচার আকৃতি ও লালন-পালনের উপযুক্ত পরিবেশে রয়েছে কি না, তা সরেজমিন তদন্ত করে লাইসেন্স নবায়ন করবে। বন অধিদপ্তরের মাধ্যমে লাইসেন্স গ্রহণের পর এসআইটিইএসভুক্ত বা সাইটেসভুক্ত (বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীর বাণিজ্য রোধের কনভেনশন-ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজারড স্পিসিস অব ওয়াইল্ড ফাউনা অ্যান্ড ফ্লোরা) পোষা পাখি রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানির আগে খামারিকে অবশ্যই সাইটেস সদর দপ্তর থেকে খামার রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে বলে বিধিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে। লাইসেন্স পাওয়ার পর কোনো খামারি পজেশন সার্টিফিকেট (পোষা পাখির মালিকানা সংক্রান্ত সনদ) ছাড়া কোনো পাখি নিজ মালিকানা বা দখলে রাখতে পারবে না। পজেশন সার্টিফিকেটের জন্য প্রতিটি পাখির জন্য নির্ধারিত বার্ষিক ফি দিতে হবে। এক বছরের জন্য পজেশন সার্টিফিকেট ইসু্য করা হবে। খামারির বিক্রয় রশিদে হালনাগাদ পজেশন সার্টিফিকেটের নম্বর থাকতে হবে। পজেশন সার্টিফিকেটও প্রতি বছর নবায়ন করতে হবে বলে বিধিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সরকার যেকোনো সময় লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে। কোনো খামারের লাইসেন্স বাতিল হলে তার পজেশন সার্টিফিকেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। বিধিমালা অনুযায়ী, পোষা পাখি খামারির ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স নবায়ন ফি লাইসেন্স ফির ২৫ শতাংশ। প্রসেস ফি দুই হাজার টাকা। বছরে পজেশন ফিও দুই হাজার টাকা। পজেশন সনদ নবায়ন ফি পজেশন ফির ২৫ শতাংশ। পেট শপের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও প্রসেস ফি ৫০০ টাকা। বছরে পজেশন ফি দুই হাজার টাকা। খসড়ায় শৌখিন পোষা পাখি লালন-পালনের জন্য লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম রাখা হলেও চূড়ান্ত বিধিমালায় সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শৌখিন পোষা পাখি লালন-পালনকারীদের লাইসেন্স নিতে হবে না। শৌখিনভাবে পোষা পাখি পালনে খামার পরিচালনার শর্ত : শৌখিনভাবে এবং খামারে পোষা পাখি লালন-পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক পোষা পাখির প্রজাতির খাঁচা সরকার নির্ধারিত মাপ অনুযায়ী হতে হবে। কতটি পাখির জন্য খাঁচার মাপ কী হবে তা বিধিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, খামারের প্রত্যেক পোষা পাখি প্রজাতির খাঁচার মধ্যে পর্যাপ্ত খাবার, খনিজ লবণ ও পানি সরবরাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাত্রের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। খামারের প্রত্যেক পোষা পাখি এবং খামার কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা নিশ্চিত করতে হবে। খামারে পোষা পাখির বাচ্চা জন্মানোর পর বাচ্চার পায়ে রিং পরানোর পর রিং নম্বরসহ লাইসেন্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। পোষ পাখি কোনো অবস্থাতেই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা যাবে না। মৃত পোষা পাখির দেহাবশেষ মাটি চাপা দিতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামারিরা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বছরে এক বা একাধিকবার পোষাপাখি প্রদর্শনী করতে পারবেন। আমদানি-রপ্তানি : সাইটেস অ্যাপেন্ডিক্স (বিলুপ্তপ্রায় নয় এমন পাখি) বহির্ভূত পোষা পাখি আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে খামারি বা আমদানিকারককে বন অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান ওয়ার্ডেনের অনুমোদন নিয়ে রাজস্ব ও ভ্যাট আদায় করে অতিরিক্ত ওয়ার্ডেন অনাপত্তিপত্র জারি করবেন। পোষা পাখি রপ্তানির ক্ষেত্রে সাইটেস পারমিট গ্রহণ করতে হবে। পোষা পাখি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে আমদানি বা রপ্তারি বা পুনঃরপ্তানি করতে হবে। আমদানি করা সব পাখির রিং নম্বর দিয়ে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। প্রত্যেক খামারিকে পোষা পাখির সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে। একইভাবে প্রত্যেক পেট শপ পরিচালনাকারীকে পোষা প্রাণী ক্রয়-বিক্রয় ও জন্মগ্রহণ করা পাখির বাচ্চার হিসাব একটি রেজিস্টারে সংরক্ষণ করতে হবে। রেজিস্টারের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডেন অফিসে পরবর্তী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে পাঠাতে হবে। কোনো পাখি জন্মালে বা কোনো পাখির মৃতু্য হলে জন্ম-মৃতু্যর সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে খামারি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডেন অফিসের রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি সার্জনের ইসু্য করা জন্ম বা মৃতু্য সার্টিফিকেটের একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। বিধিমালার অধীনে প্রত্যেক লাইসেন্স গ্রহীতাকে নির্ধারিত রেজিস্টার অনুযায়ী তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরিদর্শনকারী কোনো কর্মকর্তাকে পরিদর্শনের সময় চাওয়া মাত্র তা প্রদর্শন করতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় কোনো প্রকার অগ্রিম নোটিশ ছাড়া পোষা পাখির খামার পরিদর্শন করতে পারবে। কোনো নিয়মের ব্যত্যয় পেলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া পোষা পাখির খামার স্থাপন ও পেট শপ পরিচালনা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও খামার ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। বিধিমালা অনুযায়ী, কেউ রেজিস্টার সংরক্ষণ না করলে ও পরিদর্শনকারী কোনো কর্মকর্তাকে প্রদর্শন না করলেও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। লাইসেন্স না নেওয়া, নবায়ন না করা, রেজিস্টার সংরক্ষণ না করা ও পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাকে তথ্য দিতে না পারলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়। একই অপরাধ আবার করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড পেতে হবে।