হুমকির মুখে কারিগরি শিক্ষা!

বিধির বাইরেও ক্লাসে সম্মানী মেলে না শিক্ষকদের ফেব্রম্নয়ারি থেকে দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা সমস্যা সমাধানে আন্দোলনের দরকার নেই : সচিব

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
যাযাদি রিপোর্ট নতুন করে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা। জনবল সংকট থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা দ্বিতীয় শিফটে (প্রথম শিফটের অনুরূপ) দ্বিগুণ পরিশ্রম করলেও সেভাবে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এ কারণে নতুন ব্যাচে দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস বর্জনসহ দু'দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামছেন তারা। শিক্ষক-কর্মচারীদের এমন সিদ্ধান্তে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন। এ কারণে নতুন করে আন্দোলনে নামার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারিগরির শিক্ষকরা জানান, সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪৯টি ও ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে। বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে নানামুখী উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে। এ খাতে বাজেট বাড়িয়ে নতুন নতুন কারিগরি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এত উদ্যোগের পরও জনবল সংকটের কারণে সবকিছু ভেস্তে যেতে বসেছে। জানা গেছে, দেশের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান হলেও এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুই শিফটে পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ও লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। অন্যদিকে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চার বছর মেয়াদি ডিপেস্নামা কোর্সে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন প্রায় দুই হাজার পাঁচজন শিক্ষক-কর্মচারী। এক শিফটের শিক্ষক দিয়ে দুই শিফটের ডিপেস্নামা কোর্স পড়ানো হচ্ছে। ১৯৮৩ সাল থেকে দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলানো হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা জানান, মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বেতন-ভাতা সুবিধা দিয়ে দুই শিফটের ক্লাস পরিচালনা করেন শিক্ষকরা। দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষকদের জন্য ২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০০৯ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে তাদের বেতনের ৩০ শতাংশ বাড়তি দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে এবং নীতিনির্ধারক পদগুলোতে কারিগরি ক্যাডার নিয়োগের দাবিতে গত দুই বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. তাহের জামিল বলেন, ১৯৮৩ সাল থেকে দুই শিফটে ক্লাস নিলেও শিক্ষকরা ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুরুতে বেতনের ৫০ শতাংশ দেওয়া হলেও গত দুই বছর ধরে ২০০৯ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী বেতনের ৩০ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা সে অর্থ উত্তোলন করছেন না। তিনি আরও বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও মহাপরিচালক পদে কারিগরি ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু গত দুই বছর এসব পদে চলতি দায়িত্বে প্রশাসন ক্যাডারদের বসানো হচ্ছে। তারা আমাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো গুরুত্ব দেন না। সভাপতি বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য আগের মতো বেতনের ৫০ শতাংশ অর্থ প্রদান, ভবিষ্যতে তা শতভাগে উন্নীতকরণসহ পরিচালক ও মহাপরিচালক পদে কারিগরি ক্যাডার নিয়োগের দাবিতে আমরা আগামী ফেব্রম্নয়ারি থেকে দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. হাফিজ আহমেদ সিদ্দিক বলেন, গত ১৯ মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্বিতীয় শিফটের বেতন সুবিধা কমিয়ে আনা হয়েছে। গত বছর জুনে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং দ্রম্নত সেগুলো সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এখনো কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শিক্ষকরা ফের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, চাকরির বিধিতে না থাকলেও প্রথম শিফটের মতো শিক্ষক-কর্মচারীরা দ্বিতীয় শিফটে সমপরিমাণ কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেভাবে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। উল্টো সম্মানীর পরিমাণ আগের চেয়ে কমিয়ে আনা হয়েছে। এ কারণে নতুন করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। 'প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো উপস্থাপন করতে চাই'- যোগ করেন মো. হাফিজ আহমেদ সিদ্দিক। তবে আন্দোলনের কারণে নতুন করে সংকট তৈরি হবে না বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি তিনি বলেন, শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করে দুই শিফট চালান। তাদের সেভাবে সুবিধা দেওয়া হয় না। বাড়তি পরিশ্রমের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ অনুমোদন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি, অর্থ বরাদ্দের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছে। 'কাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে' উলেস্নখ করে মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সুখবর পাবেন। এ কারণে নতুন করে আন্দোলনে নামার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।' 'আশা করি, শিক্ষক-কর্মচারীরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাবেন'- যোগ করেন তিনি।