পাঁচ উপনির্বাচন-চসিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বৃহত্তর আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করার জন্যই জাতীয় সংসদের পাঁচটি উপ-নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সদ্যসমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ফলাফল কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিল ও নতুন নির্বাচনের দাবি জানায় দলটি। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের শূন্য হয়ে যাওয়া ৫টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোশেন ও সংসদের দুটি আসনের তফসিল ঘোষণা হবে ১৬ ফেব্রম্নয়ারি। এসব নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত অংশ নেবে বিএনপি। এরই মধ্যে তিনটি আসনে মনোনয়ন ফরমও বিক্রি করেছে দলটি। তবে দলের একটি সূত্র জানায়, পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্তত তিনটিতে এবার প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই তিনটি আসনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তারা এবার পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। গত ৬ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জাতীয় সংসদের ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচন হবে আগামী ২১ মার্চ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৯ ফেব্রম্নয়ারি। জানা গেছে, ঢাকা-১০ আসনে গতবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মান্নান। তিনি ঢাকা-১০ আসনের বাসিন্দা। অসুস্থতার কারণে তার নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি নেই। ফলে তার পরিবর্তে ধানমন্ডি থানা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আসনে আব্দুল মান্নানের মেয়ের জামাই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমও নির্বাচন করতে চান। তবে তিনি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় মনোনয়ন পাবেন কি না বলা যায় না। একটি সূত্র জানায় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নাসির উদ্দিন অসীমের সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনিও বর্তমানে লন্ডনে থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং করছেন। এ আসনে সম্ভাব্যপ্রার্থী তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামও আছে। জানতে চাইলে রবিউল আলম রবি বলেন, আমি দীর্ঘ ২৭ বছর বিএনপির সঙ্গে আছি। গত বছর প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। পরে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে নির্বাচন করতে পারিনি। আশা করি এবার দলের হাইকমান্ড আমাকে বিবেচনা করবেন। ঢাকা-১০ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পদত্যাগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন এবং নির্বাচিত হন। ফলে আসনটি শূন্য হয়। বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জোটের শরিক জামায়াত নেতা আব্দুল আলীম। এবার যেহেতু জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে না তাই বিএনপির দলীয় প্রার্থী থাকবে। এই আসনের স্থায়ী বাসিন্দা বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ঢাবি শিক্ষক ওবায়েদুল ইসলাম নির্বাচন করতে চাইলেও আইনের কারণে করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির মনোনয়ন পেতে চান। তিনি বলেন, বাগেরহাট-৪ আসনে নির্বাচন করার মতো মানসিকতা আমারই আছে। এছাড়া আর যারা প্রার্থী আছেন তারা সত্যিকারের নির্বাচন করবেন কি না সন্দেহ আছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এই আসনে অন্য যাদের নাম আছে তারা হলেন- কাজী খায়রুজ্জামান শিপন ও অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। গত ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজ্জাম্মেল হোসেনের মৃতু্যতে আসনটি শূন্য হয়। গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলীর মৃতু্যতে আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীকে জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগেই তিনি মারা যান। ফলে আসনটির নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়। ওই সময় জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিককে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু মনোনয়ন দাখিল করেও পরে তিনি ১০ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এবার ওই আসনে পুনরায় মনোনয়ন পেতে পারেন ডা. মইনুল হাসান সাদিক। এছাড়া ড. মিজানুর রহমানও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে। গাইবান্ধার বাসিন্দা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ডা. মইনুল হাসান সাদিকের নাম শুনেছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে দলের হাই কমান্ড। এদিকে গত ২১ জানুয়ারি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃতু্যতে আসনটি শূন্য হয়। এছাড়া ১৮ জানুয়ারি বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃতু্যতে আসনটি শূন্য হয়। যশোর-৬ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আবুল হোসেন আজাদ ও বগুড়া-১ আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম। এবারও তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যশোর-৬ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপুও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন প্রার্থী হচ্ছেন এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নাম শোনা গেলেও দলের যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেনের নামই শুনেছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড।