ইন্টারন্যাশনাল লিজিং

ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য শুনবে আপিল বিভাগ

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের সর্বশেষ পরিস্থিত নিয়ে এ কোম্পানিতে আদলতের নির্দেশে নিযুক্ত চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, দুর্নীতির ব্যাপ্তি, অবসায়ন সম্ভব কি না, সর্বোপরি সামগ্রিক বিষয়ে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আগামী ২৫ ফেব্রম্নয়ারি সকাল ৯টায় তাকে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের নিচে নয়, এমন পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকেও সেদিন লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসতে বলেছে আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের করা এক আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। শুনানিতে আর্থিক খাতের অনিয়ম নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছে জানিয়ে আহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, 'আদালত বলেছে, আর্থিক খাতে এ ধরনের অনিয়মে আদালত চোখ বন্ধ করে বসে থাকবে না।' গত ২১ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে অপসারিত প্রশান্ত কুমার হালদারসহ কোম্পানির শীর্ষ ২০ কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিবকে ওই নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলে, 'অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, যাতে এসব ব্যক্তি কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারেন।' এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয় হাইকোর্টের ওই আদেশে। সে সঙ্গে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই ২০ জনের নগদ অর্থ, গাড়ি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর না করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। পি কে হালদার ছাড়া বাকিরা হলেন- কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, এম এ হাশেম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নরুজ্জামান, আবুল হাশেম, মো. রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাত বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত চেয়ে করা মামলার শুনানি শেষে এ আদেশ এসেছিল হাইকোর্ট থেকে। ওইদিন আদেশে আদালত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পি কে হালদারকে অপসারণ করে কোম্পানি পরিচালনার জন্য স্বাধীন পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেয়। সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে আইএলএফএসএল। তার ওপর শুনানি করেই আপিল বিভাগ ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য জানতে চাইল। দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী গত ৮ জানুয়ারি এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, প্রশান্ত কুমার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। লিপরো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ছাড়াও বিভিন্ন 'কাগুজে কোম্পানিতে' প্রশান্ত কুমার হালদারের ১২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সম্পত্তি রয়েছে, যা তিনি 'অবৈধভাবে' অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় মামলায়। এজাহারে বলা হয়, প্রশান্ত ময়মনসিংহের ভালুকায় ৫৮৯ শতক জমি কিনেছেন, কিন্তু এর কোনো আয়ের উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে বেনামে (অন্যদের নামে) ৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা রেপটাইলস ফার্মের নামে বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া প্রশান্ত নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে বেনামে ৩৩ লাখ টাকা, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে বেনামে ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আজিজ ফেবব্রিক্স লিমিটেডে বেনামে ৬৩ লাখ টাকা, আনান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজে বেনামে চার কোটি ৯০ লাখ টাকা, একইভাবে ক্লিউইস্টন ফুড অ্যান্ড একোমোডেশনে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা, রহমান কেমিক্যালে ৭০ লাখ টাকা 'বেনামে' বিনিয়োগ করেছেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।