বইয়ে উপেক্ষিত ভাষা আন্দোলন

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
ছোটদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলী ইমাম
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৬ দিনে ২ হাজার ৪৭৫টি নতুন বই প্রকাশিত হলেও এ বছর ভাষা আন্দোলনের ওপর তেমন বই আসেনি। হাতেগোনা যে দু-চারটি বই এসেছে, এর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাছাড়া এবার ভাষার মান সংরক্ষণ, বিলুপ্ত শব্দ ও বর্ণমালা নিয়েও তেমন বই বের হয়নি। ফলে ভাষা আন্দোলনের যে মূল চেতনা তা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন পাঠকরা। তবে লেখকদের অনীহা এবং ভালো পান্ডুলিপির অভাবে এ বিষয়ে নতুন বই আসছে না বলে প্রকাশকরা দাবি করেছেন। তারা বলছেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখকরা বই লিখতে চান না। সবকিছুতেই ব্যবসায়িক চিন্তাধারা চলে আসছে। এ বিষয়ে লিখলে বই তেমন বিক্রি হবে না, এই চিন্তা থেকে অনেকেই লিখতে চান না। তবে ভাষা আন্দোলনের ওপর মানসম্মত কিছু বাই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দু-চারটি ছাড়া বেশির ভাগ প্রকাশনীতে ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রকাশিত কোনো নতুন বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিতবই চাইলে বিগত বছরগুলোতে প্রকাশিত বই তুলে দেন বিক্রয়কর্মীরা। এর মধ্যে সোমবার ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত 'ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব' বইটি প্রকাশ করেছে ম্যাগনাম ওপাস। ড. আনু মাহমুদের লেখা 'ভাষা আন্দোলনের ইতিকথা এনেছে আলেয়া বুক ডিপো। উৎস প্রকাশনী বের করেছে 'ভাষা আন্দোলনে হবিগঞ্জ'। সাহিত্য কথা এনেছে 'বঙ্গবন্ধু অসহযোগ থেকে স্বাধীনতা। তাছাড়া ভাষা আন্দোলনের ওপর বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে আরও দু'চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সব প্রকাশনী সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে এ বছর নতুন করে ভাষা আন্দোলনের ওপর আর বই প্রকাশের সম্ভাবনা নেই। শতাধিক স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এবারের মেলায় ৫৫৩টি প্রকাশনী সংস্থা অংশ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে উৎস প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা সেলিম যায়যায়দিনকে বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা ও গবেষণা কমে গেছে। বইমেলার চেতনার যে মূল জায়গার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের আগ্রহ কম। কেননা, পাঠক চাহিদা থাকলে লেখকরা লিখত, আর প্রকাশকরাও বই ছাপাতো। তাছাড়া বাংলা ভাষার বিপন্ন শব্দ ও বর্ণ নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়েও তেমন লেখা নেই। নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ম্যাগনাম ওপাসের প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো ভাষা আন্দোলন নিয়েও নতুন প্রজন্মের আগ্রহ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই ভাষার বই খুঁজছে। একসময় তরুণরা যেমন গল্প, উপন্যাসের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিল এখন তাদের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। ভালো পান্ডুলিপি ও গবেষণার অভাবেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে বইয়ের সংখ্যা কম। লেখক ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে জহির রায়হানের অমর সৃষ্টি 'একুশের গল্পে' এর তপু চরিত্রের পর এ আন্দোলন নিয়ে আর ওই মানের কোনো মানসম্মত সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। তাদের ভাষায়, ভাষা আন্দোলন নিয়ে বই প্রকাশে তাদের বিপুল আগ্রহ থাকলেও পান্ডুলিপির অভাবে তারা তা পারছেন না। আবার যা দু-একটি লেখা আসছে তারও মান ভালো না হওয়ায় এসব লেখা জনসমাদৃত হচ্ছে না। নতুন বই: বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য অনুযায়ী গতকাল সোমবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৫টি। এর মধ্যে কথাপ্রকাশ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 'ভালো মানুষের জগৎ', পুঁথিনিলয় এনেছে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'পূর্ণ ছবির মগ্নতা' ও হরিশংকর জলদাশের উপন্যাস 'প্রেমের গল্প', নাগরী এনেছে ইমতিয়ার শামীমের উপন্যাস 'গ্রামায়নের ইতিকথা', বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের 'তরুণদের ৭১ গল্প', ঐতিহ্য এনেছে শাহেদ কায়েসের 'নির্বাচিত কবিতা', বৈভব এনেছে সালাহ্‌ উদ্দীন শুভ্র'র সাইন্সফিকশন 'আলোয় অন্ধ শহর' প্রভৃতি। মূলমঞ্চের আয়োজন: অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে মেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত '৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ: বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং ড. কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানেসভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। লেখক বলছি: লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসলাম সানী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং আহম্মেদ শরীফ। কবিকণ্ঠে কবিতা: কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুজিবুল হক কবীর, আয়শা ঝর্না, চঞ্চল আশরাফ এবং মাজুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান, তিতাস রোজারিও এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। গতকাল ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ভাবনগর ফাউন্ডেশন'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন আলম দেওয়ান, মোক্তার হোসেন, রহিমা খাতুন, শারমিন সুলতানা এবং মো. মাহাবুল ইসলাম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), মো. হাসান মিয়া, (বাংলা ঢোল), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড) এবং মো. খোকন (বাঁশি)। আজ যা থাকছে: আজ ১৮ ফেব্রম্নয়ারি, মঙ্গলবার। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিন। মেলা চলবে যথারীতি বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাহিদুল হক এবং জাফর ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সম্পদ বড়ুয়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  সংবাদ সম্মেলন: সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।