বইমেলা প্রতিদিন

মেলায় বেচাকেনা তুঙ্গে

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
বত্রিশ অথবা বাঙালির ঠিকানা সুজাত মনসুর
বই বেচাকেনার ধুম পড়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। ১৭তম দিনে শুধু বাংলা একাডেমি থেকে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য প্রকাশনী ও সংস্থার বিক্রি আরও বেশি। প্রতিদিনই পাঠক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। স্টলে স্টলে ক্রেতাদের ভিড় থাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা। সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য মতে, ২ হাজার ৬২২টি নতুন বইয়ের মধ্যে গল্প ৩৫১টি, উপন্যাস ৪২২টি, প্রবন্ধ ১৪০টি, কবিতা ৭৫৮, গবেষণা ৫০টি, ছড়া ৫১টি, শিশুতোষ ১১৫টি, জীবনী ৮২টি, রচনাবলি ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ৯৯টি, নাটক ১৪টি, বিজ্ঞান ৫৪টি, ভ্রমণ ৪৮টি, ইতিহাস ৫৭টি, রাজনীতি  ৬টি, স্বাস্থ্য ১৭টি, বঙ্গবন্ধুর ওপর ৮০টি, রম্য/ধাঁধা ২০টি, ধর্মীয় ১০টি, অনুবাদ ৩০টি, অভিধান ৮টি, সায়েন্স ফিকশন ৪৪টি এবং অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ১৬২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলার ১৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৭টি। এদিকে মঙ্গলবার মেলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুলস্নাহ সিারজী বলেছেন, ১৭ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব বই বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি, ৯ লাখ, ৭৯ হাজার ৭৩১ টাকা ৫০ পয়সা। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন ঘিরে পাঠকের বিপুল আগ্রহ আমাদের আনন্দিত করেছে। একই সঙ্গে আমরা জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের পরিকল্পিত বঙ্গবন্ধুবিষয়ক শতগ্রন্থের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৮টি নতুন গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের গুরুত্বের কেন্দ্রে রেখে আমরা এবার মেলায় শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে আরও তৎপর হয়েছি। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ইতিমধ্যে সম্পন্ন শিশু-কিশোর আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রতিযোগিতায় এদেশের শিশুকিশোরদের যে প্রাণবন্ত ও বিপুল উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে তা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০' বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ এবং স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।  মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাহিদুল হক, জাফর ওয়াজেদ এবং আসলাম সানী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্পদ বড়ুয়া। প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পঁচাত্তর-উত্তর সময়ে প্রগতি ও সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে নিজেদের গড়ে তোলা একদল তরুণ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সাহসী হয়ে ওঠেন কবিতা লেখার ভেতর দিয়ে। ঢাকা ও রাজশাহী ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। কয়েকজন তরুণ কবি ও রাজনৈতিককর্মী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এক্ষেত্রে। শোক থেকে শক্তির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে প্রতিবাদী যে সাহিত্যধারাটি সৃষ্টি হয় এই ধারার সাথে কবি মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীর নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওই সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করা যেত না তখন তারাই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ উপহার দিয়েছেন যৌথ সম্পাদনায়।  আলোচকরা বলেন, বিশুদ্ধ নৈতিকতার অধিকারী বঙ্গবন্ধু নৈতিকতার প্রশ্নে কখনও আপোষ করেন নি। স্বাধীনতার এ মহানায়ক ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হবার পর দেশ এক সংকটময় মুহূর্তে উপনীত হয়। এই নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে জাতির মহাশোককে শক্তিতে রূপান্তরের জন্য সেদিন যাদের কলম সোচ্চার হয়ে ওঠে; তাদের লেখনী সংকলিত হয় গ্রন্থে। একটি জাতির আত্মত্যাগ ও মূল্যবোধের ইতিহাস জানার জন্য এ গ্রন্থ একটি আকরগ্রন্থ হয়ে থাকবে।  সভাপতির বক্তব্যে সম্পদ বড়ুয়া বলেন, জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে কবিরাই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকান্ডের পর সাহসী প্রতিবাদ তাই ধ্বনিত হয়েছে কবিদের কলমেই আর সেই প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ গ্রন্থটি।  লেখক বলছি : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শামীম আজাদ, মলয় বালা, আফসানা বেগম এবং অরবিন্দ চক্রবর্তী।  কবিকণ্ঠে কবিতা: কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদুল হক, বিমল গুহ এবং দুলাল সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আঞ্জুমান আরা, ফয়সল আহমেদ এবং মৃন্ময় মিজান। গতকাল ছিল এ. কে আজাদ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'আনন্দন'-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম, শাহনাজ নাসরিন ইলা, অসীম দত্ত, মীর মন্ডল, স্বপ্নীল সজীব, পূরবী বিশ্বাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন মো. সিরাজুল হক (তবলা), রবিনস চৌধুরী (কি-বোর্ড), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) এবং বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)। স্থাপনা ধারণা প্রদর্শনী : অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে স্থাপনা ধারণা প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল এবারের গ্রন্থমেলার উলেস্নখযোগ্য সংযোজন। প্রতিযোগীদের উপস্থাপনকৃত স্থাপনাকর্ম নিয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট স্থপতি অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী এবং স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।  আজ যা থাকছে : আজ ১৯ ফেব্রম্নয়ারি বুধবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জালাল ফিরোজ রচিত বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ডালেম চন্দ্র বর্মণ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং সাব্বীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।