রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে পাঠানোর পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক চাপের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশ সরকার আপাতত সরে এসেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তি এবং রোহিঙ্গাদের রাজি না হওয়া-এই দুইটি বিষয় তাদের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বিষয়টিকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি কূটনৈতিক ধাক্কা বলে মনে করছেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা যারা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছেন, তাদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দুই বছর আগে যখন বাংলাদেশ সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল, সেই শুরু থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্যকারী জাতিসংঘ এবং আইওএমসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আপত্তি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ সরকার নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে অবকাঠামো নির্মাণ করে এলাকাটিকে এক লাখ মানুষের বসবাসের জন্য প্রস্তুত করেছে। কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শনের পর তারা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ সরকারকে চূড়ান্তভাবে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকারকে পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হলো। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের আপত্তির ব্যাপারে প্রাকৃতিক দুযোর্গের ক্ষেত্রে এলাকাটির নিরাপত্তাকে ইসু্য হিসেবে এনেছে। 'বলপূর্বক বাস্তুচু্যত মিয়ানমারের নাগরিক যারা টেকনাফের উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে, তারা নিজেরাও ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ভাসানচরে কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী নয়। তারা এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য জায়গাটাকে নিরাপদ মনে করে না। এটা তারা বলে। এই দুই কারণে এই জিনিসটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বসতির জন্য নিয়ে আসা হবে-এই ধরনের পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে দাঁড়িয়েছে এবং এখানে ভবিষ্যতে কী করা হবে- সেটাও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।' প্রায় চার হাজার কোটি টাকার এই ভাসানচর প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে। এখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার আসল পরিকল্পনা থেকে পিছু হটলো এবং এটি সরকারের জন্য একটি ধাক্কা বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. রহমান তা মানতে রাজি নন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও বলেছেন, তারা এখন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সেজন্য আপাতত ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নেওয়া হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে ভাসানচর এলাকাটিই কতটা টেকসই বা নিরাপদ, তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকার কারণে জটিলতা হয়েছে। 'অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর যে কনসার্ন এলাকাটির সাসটেইনইবিলিটি, সেটা আমরা হয়তো প্রপারলি অ্যাসেস করতে পারিনি। এখন আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে, নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট করতে পারি। কূটনৈতিক চাপের থেকে সাসটেইনইবিলিটি একটা বড় ইসু্য বলে আমি মনে করি। যেটা আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে।' তবে সরকারের পক্ষ থেকে ভাসানচরকে যে কোনো দুর্যোগে নিরাপদ বলে দাবি করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্বীপ রক্ষাকারী বাঁধের উচ্চতা ১০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৯ ফুট করা হয়েছে। সেখানে সারি সারি বাড়িঘরের পাশাপাশি পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। এখন তাহলে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা না হলে ভাসানচরকে কীভাবে ব্যবহার করা হবে-এ ব্যাপারে সরকার এখনো কোনো আলোচনা শুরু করেনি বলে কর্মকর্তারা বলছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন নানভাবে এই ভাসানচরকে ব্যবহার করা যায় বলে তিনি মনে করেন। 'এটা অত্যন্ত অপূর্ব জায়গা। এখানে রিসোর্ট হতে পারে। পর্যটনের জায়গা হতে পারে। আমাদের দেশে অনেক গৃহহীন মানুষ আছেন, যারা সেখানে থাকতে চাইবেন। নট নেসেসারি যে আমরা রোহিঙ্গাদেরকেই শুধু সেখানে পাঠাবো।' 'তবে হঁ্যা টেকনাফ উখিয়ায় পাহাড় ধসের কথা চিন্তা করে সরকার আগে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।' এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে তারা এখন কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।