বইমেলা প্রতিদিন

মেলায় হাতে হাতে বই

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
বইমেলার শেষ ১৫ দিনে লোকসমাগম বাড়তে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু গত দুই-তিনদিন ধরে মেলায় ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে। গেল শুক্রবার থেকে মেলায় আগত বেশিরভাগ দর্শনার্থীই বই সংগ্রহ করেছেন। রোববারও একই চিত্র দেখা গেছে। মেলা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে প্রায় সবার হাতে বই দেখা গেছে। যারাই এসেছেন কম হলেও একটি বা দু'টি বই কিনেছেন। রোববার ছুটির দিন না থাকলেও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই দলবেঁধে হাজির হন বইপ্রেমি মানুষ। স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন পছন্দের বই। কেউবা আবার আগে থেকেই তালিকা করে মেলায় আসেন। তালিকা ধরে ধরে বই কিনেন তারা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেট ঘেঁটে বই পছন্দ করেছেন তারা। ঢাকার বাইরে থেকেও পছন্দের বই কিনতে মেলায় আসছেন অনেকেই। নরসিংদী থেকে মামুন, আশরাফ ও সোহেল তিন বন্ধু বই কিনতে এসেছেন। তারা জানান, পছন্দের বইগুলোর তালিকা করছেন অনেক দিন থেকে। তিন বন্ধু মিলে এসব সংগ্রহ করেছেন। গাজীপুর থেকে আসা আবুল কালাম আজাদ ও সোলাইমান মোহাম্মদ পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে এসেছেন। তারা জানান, ড. খাইরুল ইসলামের 'বিদেশ স্বদেশ', ইজাজ আহমেদ মিলনের '১৯৭১ বিধ্বস্ত বাড়িয়ায় শুধুই লাশ' এবং মেহেদী হাসান রনির 'মেঘবতী মেলার মন', এ এস এম সালাহ্‌ উদ্দিনের 'অতৃপ্ত হৃদয়' এবং আল মাহমুদের নির্বাচিত পাঁচটি উপন্যাস সংগ্রহ করেছেন। চাঁদপুর থেকে এসেছেন মৎসজীবী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান খান বোরহান। আলাপকালে তিনি জানান, বইমেলা বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। এখানে এলে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতিসত্তার চেতনা অনুভব করা যায়। প্রতি বছরই মেলা থেকে রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বই সংগ্রহ করেন। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত 'আমার দেখা নয়াচীন'সহ বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে শিকড় প্রকাশনীর প্রকাশক মিজানুর রহমান সর্দার যায়যায়দিনকে বলেন, মেলার শেষ দিকে এমনিতেই বেচাকেনা বাড়ে। এ সময়গুলোতে সবাই বই কিনতে আসেন। তবে গত বাছরগুলোর তুলনায় এ বছর বিক্রি কম বলে জানান তিনি। আবিষ্কারের প্রকাশক দেলোয়ার হাসান বলেন, লোকসমাগম না হলে মেলা জমে না। যেহেতু মানুষ বেশি আসছে, তাই বিক্রিও ভালো হচ্ছে। বাকি কয়েকদিন বিক্রি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। তবে মেলার নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। তারা বলেন, মেলার সুন্দর পরিবেশ থাকলে অনেক জায়গায় ইটের কার্পেটিং করা হয়নি। ফলে বেশি মানুষ হলেই ধুলাবালি উড়ছে। যেসব স্টলের সামনে ইটের সলিং নেই, সেসব স্টলের বইগুলো নোংরা হয়ে যাচ্ছে। প্রদর্শনীতেই পুরান হয়ে যাচ্ছে। আবার বইয়ে লেগে থাকা ধুলাবালু পাঠকের হাতে লেগে যাচ্ছে। পাঠক-প্রকাশকদের স্বার্থে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা। নতুন বই : ২২তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৪টি। তোফায়েল আহমেদের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন : বইমেলায় গতকাল প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের লেখা বই। 'রক্তঝরা মার্চ ১৯৭১ : অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা' শিরোনামের গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জার্নিম্যান বুকস। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ঘটনা অবলম্বনে রচিত বইটির উন্মোচন করা হয় রোববার। একই সঙ্গে একই প্রকাশনী থেকে বেরুনো তারিক সুজাতের কাব্যগ্রন্থ 'সুরের পথে একলা হাঁটি' এবং নাজনীন হক মিমির লেখা '৬৯-এর শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও মুক্তিযুদ্ধ' শিরোনামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুভূতি প্রকাশে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণসসহ একাত্তরের মার্চ মাসের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাকে মেলে ধরেছি এই বইয়ে। এর মাধ্যমে আমাদের ইতিহাসের দলিলকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছি। একাত্তরের পয়লা মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত নানা ঘটনাপ্রবাহ উঠে এসেছে বইটিতে। একাত্তরের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে তেসরা মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন। এর বিরুদ্ধে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন। এমন নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সংযুক্ত হয়েছে গ্রন্থটিতে। তবে এ বইটি আমি নিজে লিখিনি। আমার বলা কথার ভিত্তিতে শ্রম্নতিলিখন করেছেন দুজন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। কথার সূত্র ধরে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারির এই দিনেই এক জনসভায় তোফায়েল আহমেদই শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে পথ চলেছেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ সামাদ, অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীক। এসময় উপস্থিত ছিলেন অন্য দুটি বইয়ের লেখক তারিক সুজাত ও নাজনীন হক মিমি। মূলমঞ্চ : বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় মুর্শিদা বিন্‌তে রহমান রচিত স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু : পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭০-এর নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন মুস্তাফিজ শফি। আলোচনায় অংশ নেন আখতার হুসেন, মাহবুব সাদিক এবং আলম খোরশেদ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন মুর্শিদা বিন্‌তে রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।  লেখক বলছি : অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মশিউল আলম, মাহবুব রেজা, রুমা মোদক, চাণক্য বাড়ৈ।     কবিকণ্ঠে কবিতা : কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি শামীম আজাদ, ফেরদৌস নাহার, আমিনুর রহমান সুলতান, মুস্তাফিজ শফি, প্রত্যয় জসীম  এবং সঞ্জীব পুরোহিত। সংগীত পরিবেশন করেন অপর্ণা খান, মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, ডালিয়া সুলতানা, সুমন চন্দ্র দাস, মো. নূরুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ এবং সৈয়দা কবিতা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন অভিজিৎ রায় (তবলা), হোসেন আলী (বাঁশি), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), সুমন কুমার শীল (দোতারা)।    আজ যা থাকছে : আজ সোমবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৩তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে সাইমন জাকারিয়া রচিত সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সুমন কুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেবেন নাসির আহমেদ এবং স্বকৃত নোমান। সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।