ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গুম করছে সরকার: ফখরুল

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তৃতি করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে কুক্ষিগত করার জন্য গুমের আশ্রয় নিয়েছে, যা অতীতে আমরা বাংলাদেশে কখনো দেখিনি। তারা গুম, হত্যা, গ্রেপ্তার করছে, আবার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এইভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন দমননীতির মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা স্থায়ী করতে চায়। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখেছেন একজন সেনাবাহিনীর অফিসারর্ যাবে কাজ করতেন। অন্যায়ভাবে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। সেই সাজা থেকে বের হয়ে আসার পরে তাকে গুম করে নিয়ে যাওয়া হয়। দেড় বছর পরে তিনি ফিরে এসেছেন, কথা বলছেন না। এর কিছুদিন আগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সাত মাস পরে ফিরে এসেছে, কথা বলে না। তারও আগে একজন রাষ্ট্রদূত ৯ মাস অজ্ঞাত স্থানে ছিলেন, ফিরে এসে কথা বলছেন না। এখনো একজন জেনারেল গুম আছেন। মীর কাসেম আলীর ছেলেও গুম। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী শুধু একজন নেতা নন, তিনি গণতন্ত্রের মাতা। তিনি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন। তিনি এক-এগারো সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তিনি এই দখলদারী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাকে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের যে সংবিধান সেই সংবিধান অনুযায়ী জামিন তার প্রাপ্য হক, অধিকার। সেই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ধরনের মামলায় সবাই জামিনে আছেন। নাজমুল হুদা জামিনে আছেন, সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জামিনে আছেন। মহীউদ্দীন খান আলমগীর জামিনে আছেন। সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী আব্দুল মান্নান জামিনে আছেন। তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়ার মামলার জামিন শুনানি রয়েছে। আমরা আশা করব, প্রত্যাশা করব যে, বিচার বিভাগ তারা তাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবেন। সত্যিকার অর্থে মামলার যে রায় হওয়া উচিত সেই রায় দেবেন। তাকে আটকে রাখার কোনো বিধান নেই। তাকে আপনারা বেআইনিভাবে আটকে রেখেছেন। সরকার দেশ চালাতে পারে না উলেস্নখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের কথায় মনে হয় দেশে উন্নয়নের লহরি বয়ে যাচ্ছে। অথচ আজকে পত্রিকা খুললেই দেখবেন, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষ দ্রব্যমূল্যে হয়রান হয়ে গেছে। চাল-লবণ-সবজির দাম বাড়ছে, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এমন একটা নিত্যপণ্য নেই যার দাম বাড়ছে না। অন্যদিকে শ্রমিক ভাইদের বেতন-প্রকৃত আয় বাড়ছে না। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, 'মার্চ মাসের মধ্যে ধস নামতে শুরু করবে'। এই সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা দেশ চালাতে চায় রাষ্ট্রকে কব্জায় নিয়ে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মাতাকে কারাগারে আটক রেখে আপনারা মুজিববর্ষ পালন করছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করবেন? সেই সময় ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা থাকবে। তিনি বলেন, এ সরকারের কোনো অধিকার নেই ক্ষমতায় থাকার। তাদের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নতুন নির্বাচনই দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করুন এবং নতুন নির্বাচন দিন, যেন জনগণ তাদের রায় দিতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকেতো ধ্বংস করে দিয়েছেন। এখন কেউ ভোট দিতে যায় না। ভোট দিতে যাবে কেন, কোনো আস্থা নেই। ভোট দিতে গিয়ে কী হবে, ফলাফলতো সব নিয়েই যাবে। সুতরাং ওই ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। কেউ দিয়ে যাবে না। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার, বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, শ্রমিকদল নেতা মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, আবুল খায়ের খাজা, রফিকুল ইসলাম, মফিদুল ইসলাম মোহন প্রমুখ।