তিন মামলায় রিমান্ডে পাপিয়া

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে সোমবার তিন মামলায় শুনানি শেষে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় -যাযাদি
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়ি্যবাকে এক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকা দুজন মহানগর হাকিম সোমবার এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া ওরফে পিউসহ ওই চারজনকে শনিবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। র্ যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের 'প্রেসিডেনশিয়াল সু্যইট' ভাড়া নিয়ে 'অসামাজিক কার্যকলাপ' চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটি টাকার উপরে। রোববার ওয়েস্টিনের ওই প্রেসিডেনশিয়াল সু্যইট এবং ইন্দিরা রোডে পাপিয়াদের দুটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট ও কিছু বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করার কথা জানায়র্ যাব। পরে রোববার রাতে পাপিয়াসহ গ্রেপ্তার চারজনকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়। জাল মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় ওই থানায় একটি মামলা করা হয়, যেখানে চারজনকেই আসামি করা হয়। এছাড়া অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আরও দুটি মামলা করা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। সোমবার ওই চারজনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে তিন মামলাতেই দশ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার জাল নোটের মামলায় চার আসামিকেই পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুদ-উর রহমান। পরে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম অস্ত্র ও বিদেশি মদের মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে পাঁচদিন করে মোট দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন তাপস কুমার পাল, আজাদ রহমান ও হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন চান আইনজীবী আতিকুর রহমান, ইলতুৎমিশ সওদাগর, কলিম মৃধাসহ কয়েকজন। রোববারর্ যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার নিজের বাড়ি, বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকার ইন্দিরা রোডে ওই দম্পতির দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে দুটি ফ্ল্যাট, গাড়ি, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি পস্নট রয়েছে। এছাড়া তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় 'কার এক্সচেঞ্জ' নামে একটি গাড়ির দোকানে প্রায় এক কোটি টাকা এবং 'কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশনস' নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে তাদের। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ওই দম্পতির বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা থাকার তথ্য মিলেছে জানিয়ের্ যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উলস্নাহ বুলবুল বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় 'অস্ত্র ও মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাত করে' বিপুল সম্পদ গড়েছেন। 'এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে আসামিরা পুলিশের এসআই ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে বলে জানা যায়।' ওইর্ যাব কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকলেও স্বল্প সময়ে বিশাল সম্পত্তি ও অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন পাপিয়া ও তার স্বামী। এই বিশাল অর্থের প্রকৃত উৎস জানতে চাওয়া হলে সন্তোষজনক কোনো জবাব তারা দিতে পারেননি।