কারচুপি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ বিএনপির

গাজীপুর সিটি নিবার্চন

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০

গাজীপুর প্রতিনিধি
বিএনপি সমথির্ত মেয়রপ্রাথীর্ হাসান উদ্দিন সরকার বলেছেন, গাজীপুরবাসী ৮০ বছরের ইতিহাসে এমন ভোট ডাকাতি দেখেনি। নিবার্চনের ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের ৪০০-এর অধিক কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্বরূপ উন্মোচন করার জন্যই বিএনপি নিবার্চন বয়কট করেনি বলে জানান হাসান সরকার। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে একচেটিয়া ভোটগ্রহণ হয়েছে গাজীপুরে। বিএনপির এজেন্টদের জোরপূবর্ক কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। এমন ভোট ইতোপূবের্ গাজীপুরবাসী দেখেনি। এমন নিবার্চনের মাধ্যমে কমিশনকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এর আগে নিবার্চন চলাকালেই ভোট স্থগিতের দাবি করেছিলেন হাসান উদ্দিন সরকার। এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনে চার শতাধিক কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার দুপুরের পর ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে নিবার্চনে বিএনপি প্রাথীর্র মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। সেলের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকায় ৯০টি কেন্দ্রের উল্লেখ করা হয়েছে। দুপুর ২টার দিকেই এসব কেন্দ্র দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হাসান সরকারের মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সেখানে ৯০টি কেন্দ্রের উল্লেখ করে এসব কেন্দ্রে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। এসব অনিয়মের মধ্যে আছে ‘সবার সামনে ব্যালটে সিল মারা’ এবং ‘এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট চুরি’। বিএনপির অভিযোগে বলা হয়, ‘ভোটের দিন ভোর থেকেই গণগ্রেপ্তার ও দফায় দফায় ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ডিবি পুলিশ ধানের শীষের এজেন্ট কেন্দ্র কমিটির ১৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।’ গাজীপুরে জাল ভোটের মহোৎসব : রিজভী এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের ভোটে ‘শতাধিক কেন্দ্রে জাল ভোটের মহোৎসব’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার ভোট চলার মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘গাজীপুর থেকে যেসব খবর আমাদের কাছে আসছে, তাতে এ পযর্ন্ত শতাধিক কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান এবং ব্যালট পেপারে সিল মারার মহোৎসব চলছে।’ রিজভী বলেন, মুন্সিপাড়া, ৩, ১৫, ১৭, ৩১, ৩৫, ৩৭, ৪২ ও ৪৯ ওয়াডর্সহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির মেয়রপ্রাথীর্র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ‘অস্ত্রের মুখে, পুলিশের হুমকির মুখে এসব কাজ করে চলছে ক্ষমতাসীনরা।’ ধানের শীষের মেয়রপ্রাথীর্ হাসান উদ্দিন সরকারের প্রধান নিবার্চনী এজেন্ট সোহরাবউদ্দিন এসব বিষয়ে রিটানির্ং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার তারা পাননি বলে মন্তব্য করেন রিজভী। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পুলিশ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের ভোটে ‘ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারের ভ‚মিকা’ পালন করছে। ‘সরকার সুষ্ঠু নিবার্চন, ভোটাধিকার ইত্যাদিকে তুচ্ছ বলে মনে করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তো আছেই, এর চাইতে বড় সন্ত্রাসী বানিয়ে রেখেছে পুলিশকে। নিজেদের চেতনার লোকদের ঢুকিয়ে তারাই এখন আওয়ামী ক্যাডারের ভ‚মিকা পালন করে এক তাÐব শুরু করেছে গোটা এলাকায়। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে নিবার্চন হচ্ছে। আমরা জানি না, পরবতীর্ সংবাদ কী আসে।’ মুন্নু টেক্সটাইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের বিশাল লাইন থাকলেও কেন্দ্রের ভেতর ফঁাকা বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ভোটের দিনও বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমানকে ‘গভীর রাতে গুলশানের বাসার দরজা ভেঙে’ গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী। অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ ও আসাদুল করীম। ইসিকে বিএনপির ‘ধন্যবাদ’ সরকার যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে সাজানো নিবার্চন পরিচালনার জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ ক্ষোভের সঙ্গে নিবার্চন কমিশনকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চন নিয়ে প্রধান নিবার্চন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে একথা বলেন। বরকতউল্লাহ বলেন, সাজানো নিবার্চন করে নিবার্চন কমিশন (ইসি) গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। তারা আপাতত আর কোনো অভিযোগ জানাতে চান না। খুলনা সিটি করপোরেশন নিবার্চনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইসি কোনো অভিযোগেই ব্যবস্থা নেয়নি। গাজীপুরে বিএনপি প্রাথীর্ ১১০টি কেন্দ্রের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অভিযোগ তুলেছিল। সিইসি তদন্ত করে দেখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু উনি কী দেখেছেন তা উনিই জানেন। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাদের আপত্তি ছিল, তাকে রেখেই ইসি নিবার্চন পরিচালনা করেছে। টেলিফোনে বিএনপি অরাজকতা করার নিদের্শনা দিয়েছেÑ আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, এসব বিষয় নিয়ে তার কিছু জানা নেই। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নিবার্চন নিয়ে অভিযোগ শুধু আজকে না, শুরু থেকেই করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসির কাছে অভিযোগ জানাই, জবাব দেন এইচ টি ইমাম ও ওবায়দুল কাদের।’