বইমেলা প্রতিদিন

বৃষ্টির বাগড়া তবুও ভিড়

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
পড়ন্ত বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা মেলা। মাত্র দু'দিন পরই পর্দা নামবে প্রাণের মেলার। তাই শেষ মুহূর্তে নিজেদের পছন্দের বই বেছে নিতে ব্যস্ত পাঠকরা। মঙ্গলবার বিকালে হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা হলেও থেমে যাননি বইপ্রেমীরা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্টল থেকে স্টলে ঘুরেছেন তারা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই মোড়ক উন্মোচন করেছেন মন্ত্রী ও অতিথিরা। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বইমেলার প্রতিটি স্টলেই ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পছন্দের বই খুঁজেছেন তারা। ক্রেতাদেরকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে কোনো কোনো স্টলের সামনে পলিথিন/ছামিয়ানা টাঙিয়ে দিয়েছেন। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই এসব জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক স্টলে আবার পলিথিন দিয়ে বই ঢেকে রাখা হয়। যদিও সোমবার আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে বৃষ্টির ব্যাপারে প্রকাশকদের সতর্ক করেছিল বাংলা একাডেমি। তবে ঠান্ডা আবহাওয়া ও হালকা বৃষ্টি বেচাকেনায় প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, মেলা শেষ পর্যায়ে। বৃষ্টি না হলে আরও বেশি বই বিক্রি হতো। তাছাড়া অন্যন্য বছরের তুলনায় বই বিক্রির পরিমাণ কম বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে শব্দশৈলীর প্রকাশক ইফতেখার আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, বৃষ্টির কারণে বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের মেলায় বিক্রি কম। স্টল বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকাশনীর মান অনুসরণ করা হয়নি। যে কারণে নিম্নমানের বই দেখে পাঠকরা হতাশ হচ্ছেন। আবিষ্কার প্রকাশনীর প্রকাশক দেলোয়ার হাসান বলেন, বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা কিছুটা কম হলেও পাঠকদের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। এদিকে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে মোড়ক উন্মোচন করেছেন অতিথিরা। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে. এম খালিদ লেখক-প্রকাশকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। মঙ্গলবার নতুন বই এসেছে ৯১টি।      মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় সমীর কুমার বিশ্বাস রচিত বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন সেলিম জাহান। আলোচনায় অংশ নেন রাজু আলাউদ্দিন, তপন বাগচী এবং এ এফ এম হায়াতুলস্নাহ। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন সমীর কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি যে আমাদের অর্থনীতির একটি অন্যতম খাত, তাই নয়, বরং আমাদের রাজনৈতিক বিবর্তন ও সমাজব্যবস্থাতেও কৃষি অনাদিকাল ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু প্রণয়ন করেছিলেন তার বিশেষ গ্রাম সমবায় প্রকল্প। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ দেশে কৃষি বিপস্নব সম্ভব। সেই সঙ্গে তিনি বিশ্বাস করতেন সমবায়ের মাধ্যমেই আসতে পারে বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি।   আলোচকবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন সফল রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, রাষ্ট্রের গঠন ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় তার গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় আমরা পাই সমবায়-ভাবনার মধ্যে। তার সমবায় প্রকল্পের মূল ছিল কৃষি, গ্রাম এবং জনগণ। এ প্রকল্পের প্রায়োগিক দিকগুলোও ছিল অত্যন্ত নিখুঁত, সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী। গণমুখী ও উৎপাদনমুখী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর সমবায়-ভাবনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।  গ্রন্থের লেখক বলেন, মানুষের অধিকার ও সমতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাকে কেবল সেস্নাগানে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি সেই সোনার বাংলা গড়ার কাজে অগ্রসর হয়েছেন। আমার এ গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা ও প্রয়োগ সম্পর্কে প্রস্তাবনা মাত্র। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করার অবকাশ রয়েছে।  সভাপতির বক্তব্যে আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পান। আর এ অল্প সময়েই তিনি দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিসহ সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে সমবায়কে তিনি তত্ত্বের পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রায়োগিক দিক দিয়েও একে সফল করে তোলার পরিকল্পনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কৃষি ও সমবায় ভাবনাবিষয়ক এ গ্রন্থ মহান রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি বৃদ্ধি করবে।  লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সালমা বাণী, রফিকুর রশীদ, সাদ কামালী এবং নওশাদ জামিল।      কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সিদ্ধার্থ হক, মিলু শামস, আফরোজা সোমা, মন্দিরা এষ এবং গিরীশ গৈরিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মীর জাহিদুল হাসানের পরিচালনায় এবং মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় নাটক 'মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান'।  আজ যা থাকছে :  আজ ২৬ ফেব্রম্নয়ারি বুধবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৫তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।  বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে কামরুল হক রচিত বঙ্গবন্ধু ও সংবাদপত্র : ছয় দফা থেকে গণঅভু্যত্থান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং হারুন হাবীব। সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।