বইমেলা প্রতিদিন

বিদায়ঘণ্টা বাজবে আজ

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
দেখতে দেখতেই পেরিয়ে গেল ফেব্রম্নয়ারি মাস। তাই প্রাণে বাজছে বিদায়ের সুর। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মিলনমেলায় বিদায় ঘণ্টা বাজবে আজ। আজ রাতেই পর্দা নামছে ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার। আজকের পর থেকেই মাসব্যাপী মুখর থাকা বাংলা একাডেমি ও ঐতিহাসিক সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে নামবে পিনপতন নীরবতা। বইপ্রেমীদের ভিড়, আড্ডা আর হাতে হাতে বইয়ের দৃশ্যও দেখা যাবে না। এ মনোরম দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১১ মাস। বছর ঘুরে আবারও ফিরে আসবে বইমেলা-২০২১। দীর্ঘ ক্ষণগণনা শেষে যথারীতি ২০২১ সালে ফেব্রম্নয়ারি মাসে শুরু হবে বহুল প্রতীক্ষিত এ মেলা। ফের লাখো পাঠকের পদধ্বনিতে মুখরিত হবে মেলার দু-প্রান্তর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আয়োজন করা হয়েছে গ্রন্থমেলার সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে এবারের গ্রন্থমেলার শেষ শুক্রবার থাকায় মেলায় ঢল নেমেছিল বইপ্রেমীদের। শিশু প্রহর থাকায় সকাল ১১টায় খোলে মেলার দ্বার। দুপুর একটা পর্যন্ত ছিল শিশু প্রহর। এই সময়টাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরে হালুম, ইকরি আর শিকুদের দেখতে শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। মেলার শেষ সময় থাকায় সকাল থেকেই প্রিয় লেখকদের বই সংগ্রহ করতে আসতে শুরু করেন নগরের কর্মব্যস্ত মানুষরা। দুপুর গড়াতে শুরু করতে না করতেই ঢল নামে মেলায়। বিকাল নাগাদ মেলা টইটম্বুর। সন্ধ্যার মেলায় হাটাচলা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বিক্রিও হয় আশানুরূপ। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে গিয়ে বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত ছিল না। ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন। তাদেরই একজন রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, 'স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে মেলায় এসেছি। ওদের জন্য বই কিনেছি। ছুটির দিনটা মেলায় কাটিয়ে দিয়ে ভালো লাগল।' ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, শেষ শুক্রবার থাকায় মেলায় যারা এতদিন ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেননি তাদের অনেকেই এসেছেন। কিনে নিচ্ছেন পছন্দের বই। মো. শিহাব উদ্দীন ভুঁইয়ার নতুন বই: এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় বের হয়েছে মো. শিহাব উদ্দীন ভুঁইয়ার তথ্যনির্ভর গ্রন্থ 'এন সাইক্লোপিডিয়া অব দ্য ওয়ার্ল্ড টু আস্ক মি এনিথিং'। বইটি প্রকাশ করেছে দি ইউনিভার্সেল একাডেমি। লেখক শিহাব উদ্দীন ভুঁইয়া বলেন, বইটিতে সায়েন্স টেকনোলজি থেকে শুরু করে শত শত বিষয়ের প্রশ্ন এবং উত্তর আছে। মহাবিশ্বের দুর্লভ তত্ত্ব ও তথ্যের সমন্বয়ে এটার মধ্যে উত্তর রয়েছে। মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় আবুল কাসেম রচিত 'বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন: জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন অসীম সাহা। আলোচনায় অংশ নেন কাজী রোজী, এম এম আকাশ এবং নাসিমা আনিস। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন আবুল কাসেম। সভাপতিত্ব করেন আতিউর রহমান। প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি, কী বিশ্বব্যবস্থা- সর্বক্ষেত্রেই তাঁর বিস্ময়কর দক্ষতা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি যে দূরদর্শী অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করেছিলেন, তাকে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ শুধু স্বাগত জানাননি, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলো কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তাকেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৭২-১৯৭৫ সালের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু কতোটা উচ্চতায় তুলে এনেছিলেন এবং তিনি বেঁচে থাকলে আরও কতোদূর এগিয়ে নিয়ে যেতেন, তারই একটি পূর্ণাঙ্গ আকরগ্রন্থ আবুল কাসেমের বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন। আলোচকবৃন্দ বলেন, নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবৃত্তের সমাজব্যবস্থায় আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনাই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শনের মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন দেশে কৃষি ও শিল্পবিপস্নব ঘটিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা সম্ভব। এ কারণে তাঁর পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী এ গ্রন্থ অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। গ্রন্থের লেখক বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে উত্থিত উন্নয়নের দর্শনই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন। এ মহান রাজনীতিবিদ কেবল রাষ্ট্রদর্শনই নয়, অর্থনীতি সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন সে বিষয়গুলো এ গ্রন্থে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান বলেন, রাজনীতির মহান কবি বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথাই ছিল মানুষ এবং মানুষের কল্যাণ। তিনি যেমন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন তেমনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে অর্থনৈতিক নীতিও নির্ধারণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে এ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। লেখক বলছি- অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কামরুল হাসান, জাহিদ রেজা নূর, অদিতি ফাল্গুনী এবং মাসুদ পথিক। আজকের আয়োজন: আজ গ্রন্থমেলার সমাপনী দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬.৩০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০'-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়াকে সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ্‌ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০, ২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০ এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক আয়োজন: আজ ৮টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন আবৃত্তিশিল্পী রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে রয়েছে লেজার শো।