ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পেঁয়াজ চাষিরা উদ্বিগ্ন

প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত চাষি
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। প্রায় ছয় মাস পর এই নিষেধাজ্ঞা তুলল দেশটি। তবে এই খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের পেঁয়াজচাষিরা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন তারা। অনেকের পেঁয়াজ এখনো মাঠে রয়েছে, আবার অনেকের পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। তাদের আশঙ্কা, ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে এখন ব্যাপক পরিমাণ পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করবে। ফলে তারা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যয্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। লোকসানের মুখোমুখি হবেন তারা। এ কারণে অন্তত আরও ২-৩ মাস পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ার দাবি তাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের একাধিক পেঁয়াজচাষির সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজচাষি মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, 'শুনলাম ভারত নাকি পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এর ফলে এখন হুরমুর করে দেশের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজে ভরে যাবে। আর আমরা লোকসানের কবলে পড়ব। অতীতে এই মৌসুমে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে পেয়েছি ১৫ থেকে ১৭ টাকা। এ বছর ভালো দামই পাচ্ছিলাম। প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ মাঠেই বিক্রি করেছি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। কিন্তু হঠাৎ করে বাইরের পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে তো দাম আগের দরে চলে যাবে। তখন তো আমরা লোকসানের মুখে পড়ব।' তিনি বলেন, 'বিভিন্ন কারণে এ বছর অতীতের বছরগুলোর তুলনায় বেশি দামে পেঁয়াজের বীজ কিনতে হয়েছে। একইভাবে এ বছর ক্ষেতে কাজ করার শ্রমিককেও বেশি দাম দিতে হয়েছে। তার পরও উৎপাদিত পেঁয়াজের যে দাম পাচ্ছিলাম, তাতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালোই দাম হাতে এসেছে। কিন্তু ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে সেই দাম যদি পড়ে যায় তাহলে তো আমরা মাঠে মারা যাবো। ভালো দামের আশায় ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি।' প্রায় একই কথা বলেছেন পাবনার পেঁয়াজ চাষি কেরামত আলী। তিনি জানিয়েছেন, 'ভালো দামের আশায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এতে খরচও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। এখন যদি আবার সেই আগের মতো ১৫ টাকা ১৭ টাকা কেজি দরে উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয় তাহলে তো \হমরে যাব। অন্তত আরও ২-৩ মাস সরকার যাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেয় সে দিকটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।' এদিকে রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক হাজী আবদুল মজিদ বলেন, 'ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব। কারণ ভারতের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো রয়েছে আমাদের গুদামে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু করলে এগুলো কে কিনবে? এ অবস্থায় আমাদের দিকটি সরকারের বিবেচনা করা উচিত।' এদিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে দাম কমে যাবে। তবে সেটি যদি অতি মাত্রায় কমে যায় তাহলে উৎপাদনকারী কৃষক, আমদানিকারক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেনের বরাত দিয়ে আমাদের হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ইতোমধ্যে নতুন জাতের পেঁয়াজ উঠেছে। ফলে সেখানকার বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এমনকি পেঁয়াজ রপ্তানি না হওয়ায় ভারতের অনেক প্রদেশে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেয়ে আন্দোলন করেছেন। পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। উলেস্নখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, 'কোনোভাবেই দেশের কৃষকদের লোকসানের কবলে পড়তে দেওয়া যাবে না। কৃষক যাতে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষে আরও বেশি আগ্রহী হয় সে বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।' এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, 'ভবিষ্যতে ভারতের ওপর পেঁয়াজ নিয়ে নির্ভর করা ঠিক হবে না। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই পথ, সেটা হলো পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। সরকার সেভাবেই পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকার সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখছে।' অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জানিয়েছেন, 'এখনো সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।' বাংলা ট্রিবিউন