পাপিয়ার দুই সহযোগী ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শামীমা নূর পাপিয়া
জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা এবং অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়ি্যবা (২২)। রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদার হোসাইন পঁচা দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে এই মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দুইজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। একই সঙ্গে ওইদিন শেরে বাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের পাঁচ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রম্নয়ারি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করের্ যাব ১-এর একটি দল। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়ি্যবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি এবং অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায়র্ যাব। গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সু্যট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পঁচাটি পাসপোর্ট, তিনটি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করের্ যাব। র্ যাবের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। সাত নারীকে এই কাজে ব্যবহার করত পাপিয়া। এ ছাড়া হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল সু্যট বুক থাকত। সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল সু্যটে অবস্থান করে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা পরিশোধ করে পাপিয়া। রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডের 'রওশনস ডমিনো রিলিভো' ভবনে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে পাপিয়া-মতি সুমনের। এ ছাড়া নরসিংদী শহরে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকার দুটি পস্নট রয়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এ ছাড়া তেজগাঁও বিএফডিসি গেটের পাশে অংশীদারিত্বে পাপিয়ার 'কার একচেঞ্জ' নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। নরসিংদী জেলায় 'কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন' নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্যও রয়েছে।