লবণ সিন্ডিকেটে পোস্তায় কঁাচা চামড়ায় পচন

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
লবণমিশ্রিত চামড়া
একদিকে পানির দরে বিকোচ্ছে কঁাচা চামড়া, অন্যদিকে আড়তের সামনে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে চামড়ার গায়ে লবণ দিতে না পারায় তা পচে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লবণ না দেয়ায় চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পৌঁছেছে যে এগুলো এখন ফেলে দিতে হবে। সঠিক সময়ে লবণ না পাওয়া ও অতিরিক্ত দামের কারণে এবার এমন অবস্থা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এবার চামড়া কিনে লালবাগের পোস্তার কাজী শাহজাহান অ্যান্ড সন্সের মালিক কাজী মোহাম্মদ সোহেলের মাথায় হাত। লাভের আশায় চামড়া কিনলেও তা সংরক্ষণে প্রয়োজন মতো লবণ দিতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ঈদের আগে এক বস্তা (৭৫ কেজি) লবণের দাম ছিল মাত্র ৯৪০ টাকা। অথচ ঈদের দিন থেকে সেই লবণের দাম হয়ে গেছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি বস্তা লবণে দাম বেড়েছে ৫৬০ টাকা। ঈদের পরে সিন্ডিকেটের কারণে আমরা সঠিক সময়ে লবণ পাইনি। এ অবস্থায় ব্যবসার লাল বাতি জ্বলেছে, মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ কাজী সোহেলের ভাষ্য, লবণ সিন্ডিকেটের কারণে এবার ১০ লাখ টাকার চামড়া পচে গেছে। আমি দেড় হাজার পিস গরুর চামড়া কিনেছিলাম। এই চামড়া সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর প্রতিটা দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারতাম। সব মিলিয়ে বিক্রি হতো ৩০ লাখ টাকা। ‘এখন লাভ তো দূরে থাক বিক্রিই করতে পারব না। ১০ লাখ টাকা এখন পানিতে। কিছু লোক কোনো কারণ ছাড়াই লবণের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেট থেকে আমরা বঁাচতে পারি না। কোরবানির ঈদ আসলেই এই সমস্যায় পড়ি।’ শনিবার লালবাগ পোস্তার ওয়াটার ওয়াকাসর্ রোড ঘুরে দেখা গেছে, লবণের অভাবে অনেক ব্যবসায়ীর কেনা কঁাচা চামড়া পচে গেছে। কেউ কেউ আবার পচা চামড়াতে-ই লবণ ব্যবহার করছেন, যদি কিছুটা ভালো থাকে। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মাচের্ন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনেরও কেনা চামড়া পচে গেছে। লবণ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ২৫টা বড় গরুর চামড়া ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন তিনি। জানালেন, লবণের ৪০০টি ছাগলের চামড়া পচে গেছে। এসবের প্রতিটা দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হতো। লবণ সঙ্কটের কারণে প্রায় ৬২ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আলমগীর হোসেন বলেন, সরকার লবণের দাম বাড়ায়নি। অথচ চাহিদা বেশি থাকায় লালবাগেরই একটা সিন্ডিকেট কোনো কারণ ছাড়াই আকাশ চুম্বি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, কঁাচা চামড়ায় সবোর্চ্চ ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়, কিন্তু অনেকে এখন পযর্ন্তও দিতে পারেননি। একটা গরুর চামড়ায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে। পোস্তার আড়তদার মোহাম্মদ শহিদ বলেন, আমি বেশি দাম দিয়েও লবণ পাইনি। আমাদের লাখ লাখ টাকার চামড়া পচে গেছে। জানা যায়, পোস্তায় হাতে গোনা পঁাচটি লবণের আড়ত রয়েছে। কারও কারও মজুদও রয়েছে। তবে হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন লবণ ব্যবসায়ীরা। তবে বিষয়টি ঠিক নয় জানিয়ে মদিনা সল্টের স্বত্বাধিকারী জামিল আহম্মেদ বলেন, এবার আড়াই হাজার বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে। এরপরও লবণ কিনতে আসেন চামড়ার আড়তদাররা। আমরা এত লবণ কোথায় পাব? ‘এরপরও চাহিদা বিবেচনায় ঈদের দিন অতিরিক্ত ট্রাক ও লেবার ভাড়া দিয়ে আড়তে লবণ তুলেছি। বেশি দামে কিনতে হয়েছে তাই বিক্রিতেও দাম বেড়েছে। আর সঙ্কট তো আছেই।’ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানায়, চলতি বছরে মোট এক কোটি ৭ লাখ কঁাচা চামড়া সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মাচের্ন্টস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যানাসর্ অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। এ ক্ষেত্রে ৮০ হাজার মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। তবে বিসিক ও লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে পযর্ন্ত সব মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে লবণের চাহিদা ১৬ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে বছরে ঘাটতি থেকে যায় এক লাখ ২৮ হাজার টন লবণের। তবে সে অনুযায়ী, প্রায় দেড় লাখ টন লবণ আমদানির সুপারিশ করেছে বিসিক। যা এরই মধ্যে বাংলাদেশ আমদানিও করেছে। যোগাযোগ করলে বিসিকের মহাব্যবস্থাপক (প্রযুক্তি বিভাগ) প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, বতর্মানে লবণের কোনো সঙ্কট নেই। ঈদের পর থেকে হঠাৎ দাম বাড়ারও কোনো কারণ দেখছি না। একটা কুচক্রী মহল দাম বাড়ানোর পঁায়তারা করছে। তারা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে কৃত্রিম সঙ্কটের বিষয়টি বিসিকের নজরে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরেজমিন পরিদশর্নও করেছি। এদিকে লবণ সঙ্কটে চামড়া পচে যাওয়ার ক্ষতি দেখতে শনিবার নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি এলাকা পরিদশর্ন করেছে বিসিক।