সংক্রমণ ঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নকর্মীরা

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন কয়েকজন কর্মী
করোনা সংক্রমণের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সিটি করপোরেশন থেকেও যেটুকু ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দেওয়া হয়েছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও বেশিরভাগ কর্মী সেসব ব্যবহার করছেন না। অনেকে পিপিই বিক্রি করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় নিয়মিত স্কেলভুক্ত ১ হাজার ৭শ' ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৫ হাজার ৩শ'সহ মোট ৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। আর উত্তর সিটিতে নিয়মিত স্কেলভুক্ত ২ হাজার ৭শ' ও প্রাইভেট কোম্পানির ১ হাজার ৩শ' কর্মী কাজ করছেন। সব মিলিয়ে দুই সিটিতে প্রায় ১২ হাজারের মতো পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। এদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত কর্মীদের জন্য মাস্ক, বুট ও হ্যান্ড গস্নাভস দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাইভেট কোম্পানির কর্মীদের এখনও তা দেওয়া হয়নি। শনিবার (২৮ মার্চ) সকালে দক্ষিণ সিটির রাজারবাগ এলাকায় কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া কাজ করতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। তাদের একজন গিয়াস উদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, 'আমরা সিটি করপোরেশনের লোক না। প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে নিয়ে আসি। কোম্পানি আমাদের কোনও কিছুই দেয়নি।' সেখানে কর্মরত সিটি করপোরেশনের কর্মী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা হ্যান্ড গস্নাভস, মাস্ক ও বুট পেয়েছি। কিন্তু এগুলো পরে কাজ করতে কষ্ট হয়। তাই খুলে রেখেছি।' উত্তর সিটির বাড্ডা এলাকায় গিয়েও একই অবস্থা দেখা গেছে। সেখানকার কর্মীরা জানান, তারা মাস্ক ও গস্নাভসসহ কিছু সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছেন। কিন্তু গরমের কারণে সেসব পরে কাজ করতে আরাম পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সিটি করপোরেশনের নিয়মিত বর্জ্যের সঙ্গে তেমন একটা না ছড়ালেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য এভাবে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তারা ময়লা সংগ্রহ করেন বাসা থেকে। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত মানুষের ব্যবহৃত মাস্ক ও জিনিসপত্র থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের শরীরে রোগটি সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য তাদের পিপিই পরা খুবই জরুরি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজিবিষয়ক সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান খান বলেন, 'সিটি করপোরেশনের যেসব ময়লা-আবর্জনা হয় সেগুলোর মধ্যে এই ভাইরাস খুব একটা ছড়ানোর ঝুঁকি না থাকলেও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অবশ্যই পিপিই পরা উচিত। তাছাড়া তাদের যেহেতু মাঠে থাকতে হচ্ছে, সে কারণে এই জিনিসপত্রের ব্যবহার কঠোরভাবে নিশ্চিত করা আবশ্যক।' এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার মিলস্নাতুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের সব কর্মীর জন্য হ্যান্ড গস্নাভস, বুট ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের নিজস্ব পোশাক দেওয়া হয়েছে। আমরা আরও কিছু উন্নত পিপিই কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। কর্মীদের অনেকেই সচেতন নয়। তাদের সচেতন করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।' উত্তর সিটির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এস এম শফিকুর রহমান বলেন, 'করপোরেশন থেকে বরাদ্দ পাওয়ার আগেই আমরা ৪০ শতাংশ পিপিই কর্মীদের দিয়েছি। বর্তমানে আমাদের কর্মীদের জন্য শতভাগ সেফটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের হ্যান্ড গস্নাভস, বুট ও মাস্কসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে।'