ইন্টারনেটে চাপ বাড়লেও মোবাইল কল কমেছে

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্মার্টফোন
নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটিতে দেশজুড়ে মানুষের ঘরে অবস্থানের মধ্যে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার বাড়লেও মোবাইলে কথা বলাসহ টেলিকম সেবার বিক্রি কমছে বলে জানিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। মোবাইল অপারেটরদের আয়ের সিংহভাগের উৎস হলো ভয়েস ট্রাফিক। সেখানে এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা হুমকির মুখে পড়বে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে কোনো কোনো অপারেটর। বৈশ্বিক মহামারি রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়েছে। ছুটির সময়ে সবাইকে বলা হয়েছে নিজের ঘরে থাকতে। বাইরে বের হতে না পারা মানুষের এখন ঘরে সময়ের অনেকটাই কাটছে ইন্টারনেটে। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকায় কমছে মোবাইল কল। দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা জানিয়েছে, সাধারণ ছুটির এই কয়েকদিনে ভয়েস ট্রাফিক ৮ শতাংশ, মোবাইল ব্যালান্সের রিচার্জ ১৭ শতাংশ ও খুচরা বিক্রি ৬০ শতাংশ কমেছে। রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, তবে ডাটার ব্যবহার বেড়েছে ২১ শতাংশ। কিন্তু ডাটা মূল্যে ভর্তুকি ও বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে এবং খরচের তুলনায় কম মূল্যের সেবা দেওয়ার কারণে রাজস্ব আয়ে এর কোনো প্রতিফলন হবে না। জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের রিচার্জ সেবা কোথাও কোথাও 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার সম্মুখীন' হয়েছে মন্তব্য করে শাহেদ বলেন, 'এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এই বছরে আমাদের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ও মুনাফা হুমকির সম্মুখে পড়বে।' ২০১৯ সালে রবির মোট রাজস্ব আয় করেছে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যার মধ্যে করপরবর্তী মুনাফা ছিল ১৭ কোটি টাকা। জানতে চাইলে বিজিবি এক নম্বর গেটসংলগ্ন মিজান টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মিজান বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় রিচার্জ করা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। লোকজন রিচার্জ করতে আসে না বলেই চলে। 'দোকান আগে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চালু থাকলেও এখন রাত ৯টায় বন্ধ করতে হচ্ছে। কারণ কোনো গ্রাহক নেই।' ভয়েস ও ডেটা ব্যবহারে 'মিশ্র প্রবণতার' কথা তুলে ধরে গ্রামীণফোনের মুখপাত্র মুহাম্মদ হাসান বলেন, 'সার্বিক বিষয়ে নিশ্চতভাবে মন্তব্য করার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।' তবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়ায় ছুটির কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির লাভ বা ক্ষতির সম্ভাবনার বিষয়ে কোনো আগাম তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি। ২০১৯ সালে গ্রামীণফোনের করপরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট সেবা খাত থেকে আয় বেড়েছিল ১৭ শতাংশ এবং ভয়েস থেকে আয় বেড়েছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস সিনিয়র ম্যানেজার আংকিত সুরেকা বলেন, 'গ্রাহকদের ডেটা ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে তা খুব উলেস্নখযোগ্য নয়। যেহেতু সবাই বাসায় অবস্থান করছেন, এমতবস্থায় আমাদের রিচার্জ দিন দিন ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে।' ছুটির কারণে আর্থিক লাভ-ক্ষতির সম্ভবনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মূল প্রতিষ্ঠান ভিয়নের প্রথম প্রান্তিকের রিপোর্ট প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।' এক অপারেটরটের গ্রাহক রায়হান আহমেদ বলেন, 'বিভিন্ন প্রয়োজনে আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দিনে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট কথা বলতে হতো। ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে থাকা, তাই ফোনকল কম হচ্ছে খরচও কম হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ যোগাযোগই ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলছে।' টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসেবে, গত ফেব্রম্নয়ারি নাগাদ দেশে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকমসহ চার অপারেটরের মোবাইল গ্রাহক রয়েছে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি।