রাজধানীতে জানালায় পাখি কিচিরমিচিরে ভাঙছে ঘুম

প্রকাশ | ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনার সংকটের মধ্যে হারানো স্বরূপে ফিরছে প্রকৃতি। রুক্ষ্ণ নগরে বাড়ছে আকাশচারীর কলতান -যাযাদি
'ডাকে পাখি খোলো আঁখি, দেখো সোনালি আকাশ, বহে ভোরেরও বাতাস'-গানটির কথাগুলোকে যেন সত্য করে দিয়েছে প্রকৃতি। কংক্রিটে মোড়া যন্ত্র সরগোলের যেই ঢাকায় প্রকৃতির আহ্বান মানুষের কাছে পৌঁছাতো না এতদিন, সেখানে এখন ভোরের জানালায় বসছে পাখি। গান শুনিয়ে ঘুম ভাঙাচ্ছে ঘরবন্দি রাজধানীবাসীকে। এই তো কয়েকদিন আগেও ঢাকাবাসীর ঘুম ভাঙতো ?'ময়লাওয়ালার' বাঁশির সুরে কিংবা নানা হট্টগোলে। সেখানে এখন শোনা যায় সত্য, সুন্দরের আহ্বান। নিস্তব্ধ ভোরের স্নিগ্ধতায় গান গেয়ে যায় পাখপাখালি। খোলা জানালায় হু হু করে ঢুকে যায় নির্মল বাতাস, কিংবা তার ঘ্রাণ। আড়মোড়া ভেঙে ব্যালকনি নয়তো বারান্দায় দাঁড়ালে মেলে নির্মল আকাশ। যাদের বারান্দায় আকাশ নেই, বাইরে বেরোলে তারাও পেয়ে যান অন্যরকম সে ভালোলাগা। এ যেন এক অচেনা ঢাকা। গত ২৬ মার্চ থেকে করোনার প্রকোপ ঠেকাতে ঘরবন্দি হয়ে আছেন রাজধানীবাসী। সড়কে মিলছে না যন্ত্রযান। নেই শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ। যেই ঢাকার ঘুম ভেঙে যেত ফজরের কালে, এখন দুপুর গড়ালেও যেন ঘুম ভাঙে না। এই অবস্থায় রাজধানীর আকাশে হরহামেশায় দেখা মিলছে নানা গোত্রের পাখি। সকাল-দুপুর-বিকাল-রাতে শোনা যাচ্ছে তাদের কিচিরমিচির। কারও কারও বাসায় ঢুকে যাচ্ছে চড়ুই, জানালায় বসছে টিয়া। দুপুর বিকালে শোনা যাচ্ছে কোকিলের ডাক। যেখানে ক'দিন আগেও কাক ছাড়া কোনো পাখিটির টিকিটিও মিলতো না। শান্ত পরিবেশে পাখির ডাকে রীতিমতো চমকিত, অভিভূত, আহ্লাদিত রাজধানীবাসী। আর অনুভূতির কথা তারা ফেসবুক পেজেও শেয়ার করছেন। ফারাহ ইশরাত তার ওয়ালে লিখেছেন, আগাগোড়া শহরে বড় হওয়া আমার পাখির ডাকের সঙ্গে খুব একটা চেনা জানা নেই।... কাক ছাড়া অন্য কোনো পাখি শেষ কবে দেখেছি মনে পড়ে না। ভালো লাগছে পাখির মধুর ডাক। আগে কান পেতে খুব শোনা হয়নি, বাট ইদানীং শুনে মনে হচ্ছে প্রকৃতির চেয়ে সুন্দর সুর আর কেউ তৈরি করতে পারে না। রহমান মাসুদ নামে একজন লিখেছেন, প্রতিদিন ভোরে বিভিন্ন পাখির (বুলবুল, সারস, চড়ুই ও কাক) ডাকে আমার ঘুম ভাঙে। বারান্দায় যাই। পাখিদের এ ডাল থেকে ও ডালে ওড়াওড়ি ও ভালোবাসাবাসি দেখে পুলকিত হই। মনে হয় যেন আমি ছোট্ট বেলার সেই গ্রামেই আছি। কেউ কেউ আবার প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলছেন। সজল শিকদার লিখেছেন, প্রকৃত যেভাবেই হোক না কেন তার চলার গতিপথ সে ঠিক রাখবে। এখান থেকেও শিখতে হবে, বুঝতে হবে, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে আমাদের কী করা উচিত ছিল আর প্রকৃতপক্ষে কী করেছি! এখন কী করা উচিত.... পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার তত্ত্বে সরকারি ছুটি জারি করেছে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। কেননা, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়টাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সারাদেশেই যখন মানুষ নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছে, তখন প্রকৃতিও তার স্বরূপে ফিরে আসার প্রয়াস চালাচ্ছে। হয়তো খুব তাড়াতাড়িই করোনা চলে যাবে, সেসঙ্গে প্রকৃতিকে ভালোবাসার দীক্ষাটা হয়তো রেখে যাবে।