ত্রাণের আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন তারা

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনায় কর্মস্থল বন্ধ, তাই একটু সহায়তার আশায় রাজধানীর সড়কে অপেক্ষায় থাকেন অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ। প্রাণপণ চেষ্টার পর পেয়েছেন ত্রাণ। তাদের কাছে এ খাদ্যসামগ্রী এখন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন -যাযাদি
'বন্ধ পড়বো বুইজ্যা তিন কেজি আটা আইন্ন্যা ঘরে রাখছিলাম। ওডি বানাইয়া বানাইয়া খাইতাছি আজকা তিন দিন। আজকা পুলাইপানে ভাত চাইছে, না পাইয়া রাস্তায় আইছি। যেমনেই হোক, গাড়ি-ঘোড়া থিকা পাই আর যেহান থিকাই পাই-চাইড্ডা ডাইল-ভাত রাইন্দ্যা খাওয়ামু।' সরকারের ত্রাণের আশায় কারওয়ানবাজার মোড়ে বসে অপেক্ষা করতে থাকা রিনা কথাগুলো বলছিলেন। রিনার এক ছেলে, এক মেয়ে। রাজধানীর কারওয়ানবাজার মোড়ে বেলা ১১টার দিকে রিনাসহ বাজার সংলগ্ন নাখালপাড়া বস্তির শিশু, মধ্যবয়স্ক ও বৃদ্ধারা অপেক্ষা করছিলেন সরকারি ত্রাণের জন্য। তারা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর তাদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের কাছে যা জমানো টাকা ছিল তাও শেষ। অন্যদিকে সরকার চাল-ডাল-সাবান দিচ্ছে। সেসবও তারা পাচ্ছেন না। তাই রাস্তায় বের হয়েছেন, যদি কোথাও ত্রাণ দিতে দেখেন, সেখান থেকে নেবেন। ইতোমধ্যে অনেকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এখন ত্রাণ না পেলে সবাইকে পুরো উপোস থাকতে হবে। তাদের একজন নাছমিনা বলেন, 'আমার তিন ছেলে। স্বামী রিকশা চালায়। আমি বাসা-বাড়িতে কাজ করি। বাসা-বাড়িও বন্ধ। কাজ দেয় না। কয়, করোনা শেষ হইলে যাইবার। বেতনও তো দেয় নাই। বেতন ছাড়া চলি কী কইরা! যেসব জায়গায় টাকা-পয়সা পাইতাম, ওইগুলা দিয়া চললাম। এহন তো আর খাওনের জু নাই।' সাগর নামে আরেকজন বলেন, 'আমাদের ওইদিকে রেললাইনের রাস্তা। ত্রাণের গাড়ি হয়তো যাইতে পারে না। আরেক দিকে দিলে পাই না। আগে একটা ব্যবসা করতাম। এহন সব বন্ধ। আর চলতে পারি না।' রিকশাচালক শহিদুল বলেন, 'হুনি, এদিক-ওদিক পাইতেই আছে। আমরাই পাই না। যার ফলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। দেহি, গাড়ি দিয়া চাল-ডাল নিয়া যায় কি না।' ঘরে খাবার না থাকায় ত্রাণের আশায় রাস্তায় বের হয়েছেন বসুন্ধরা শপিং মলের পেছনে থাকা বৃদ্ধা মমতা। তিনি বলেন, 'বাইরে বাইর অইচি পেটের দায়ে। খাবার-দাবার (সরকারের ত্রাণ) বেকেই (সবাই) বলে পায়, আমরা তো পাই না।' করোনায় রাস্তাঘাট, কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। সরকার ত্রাণ দিলেও অনেকেই তা পাচ্ছেন না। ত্রাণ না পেয়ে অনেকেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। অনেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাতও পাতছেন।