সংসদ টিভিতে পাঠদান

শিক্ষক-টেকনিশিয়ান সংকটে ক্লাস রুটিন এলোমেলো

বিভিন্ন স্টুডিওতে রেকর্ডিং করা ক্লাসগুলো প্রচার করে বেশ প্রশংসা পেলেও কারিগরি ও ক্লাস রুটিন এলোমেলো হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে, যা আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে গত ২৯ মার্চ রোববার থেকে সংসদ টিভির মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্টুডিওতে রেকর্ডিং করা ক্লাসগুলো সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রচার করে বেশ প্রশংসা পেলেও কারিগরি ও ক্লাস রুটিন এলোমেলো হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়া ইউটিউবে ও অনলাইনে লাইভ প্রচারের সময় আপত্তিকর, অশালীন মন্তব্যের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে এসব সমস্যার কথা চিহ্নিত করে তা সমাধানের পথ খুঁজছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম দফা ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাসগুলো রুটিন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু রুটিনের ক্লাস রেকর্ডিং করতে গিয়ে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মুখে পড়তে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। করোনা আতঙ্কের কারণে শিক্ষক, টেকনিশিয়ান ও ক্যামেরা পার্সন পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও টাইমিং করানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় রুটিনে কিছুটা এলোমেলো হয়েছে, যারা জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এদিকে প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিনের ক্লাস বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। নতুন রুটিনে কয় তারিখ ও কয়টি ক্লাস রয়েছে তা এখনো জানানো হয়নি। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করায় আপাতত ওই দিন পর্যন্ত ক্লাসগুলো রেকর্ডিং করা হয়েছে। তবে কোন ক্লাসের কোন বিষয়ে রেকর্ডিং হয়েছে তা জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী। এদিকে শুরু থেকেই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস প্রচার করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ঘোষিত রুটিনের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকা এবং টেকনিশিয়ানের অভাবে এক বিষয়ের স্থলে অন্য বিষয়ের ক্লাস নিতে হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় দফা এটি থাকবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী বুধবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮টি ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও একটি ক্লাস বেশি হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত রুটিনে বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে নবম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময় নেওয়া হয় রসায়ন বিষয়ের ক্লাস। রুটিনে না থাকলেও এইচএসসি জীববিজ্ঞানের ক্লাস নেওয়া হয় পরের সময়টুকুতে। রুটিনে না থাকায় এইচএসসি পর্যায়ের কোনো শিক্ষার্থী বিষয়টি জানত না। এ ব্যাপারে মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আইরিনা সুলতানা বলেন, টেলিভিশনের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস প্রচার হওয়ার কথাই জানতাম। এইচএসসির ক্লাস হচ্ছে তা আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। যাদের জন্য ক্লাস তারাই যদি না জানে তাহলে এ ক্লাস প্রচার করে কী লাভ- এমন প্রশ্নে শাহেদুল খবির বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। শিক্ষক পাওয়া গেলে টেকনিশিয়ান পাওয়া যায় না, আবার টেকনিশিয়ান পাওয়া গেলে ক্যামেরাম্যান বা শিক্ষক পাওয়া যায় না। তাই যে ক্লাস যে শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে সেটি রেকর্ডিং করে প্রচার করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণি বা রুটিন পরিবর্তনের বিষয়টি আগে জানালে ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি। যত সমস্যা : গত চার দিনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে এখন তিনটি বড় সমস্যা। প্রথমটি হলো সাউন্ড। যারা ইউটিউব বা লাইভে ক্লাস শুনেন তাদের শব্দগত সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে। আলাদা সাউন্ডবক্স লাগিয়েও শব্দ শোনা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়টি হলো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সাদা বোর্ড ব্যবহার করায় অনেক বিষয়টি বোঝা যায় না। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজির বিষয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। সূত্রগুলো যখন বোঝানো হয় তখন একদিকে সাউন্ডের সমস্যা, অন্যদিকে সাদা বোর্ডের সমস্যা। এছাড়া অনলাইনে পরিবারের সঙ্গে ক্লাসগুলো দেখতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কমেন্ট বক্সে অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে অনেকেই ক্লাস দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে ইউটিউব থেকে সেটি দেখতে গেলে শব্দগত জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। শব্দ এত কম যে আলাদা সাউন্ড বক্স লাগানোর পরও তা বোঝা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, শব্দগত সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই এটি কেটে যাবে। তবে অনলাইনে আপত্তিকর মন্তব্য বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ইউটিউবে যখন সরাসরি ক্লাসটি প্রচার হয় তখন হাজার হাজার কখনো লাখের মতো ভিওয়ার সেটি দেখে। সেখানে কমেন্টস নিয়ন্ত্রণ করার মতো পদ্ধতি কারও হাতে নেই। তিনি বলেন, শুধু সংসদ টিভি কেন, আইইডিসিআর যখন অনলাইনে বিফ্রিং করেন তখনো আপত্তিকর মন্তব্যের মধ্যে তাদের পড়তে হয়। আমি নিজে দেখেছি যেসব মন্তব্য আসে তা খুবই আপত্তিকর। সবাইকে দায়িত্বশীল মন্তব্য করার অনুরোধ করে তিনি বলেন, বাবা মা কখনো পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে ক্লাসগুলো দেখেন। বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের ক্লাসগুলো তাদের কিছুই বোঝেনি। বোর্ড সাদা হওয়ায় কোনো লেখাই বোঝা যায়নি। শিক্ষকের কথাগুলো ঠিকমতো ধরা গেলেও বোর্ডের লেখা বোঝা না যাওয়ায় ক্লাসগুলো প্র্যাকটিক্যালি করা যায়নি। এছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকায় অনেকের মনোযোগ নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। বোর্ডে যেসব লেখা দেখানো হচ্ছে সেগুলো আরও জুম করে বড় করে দেখানোর বিষয়ে কাজ চলছে বলে পরিচালক জানান। তিনি বলেন, লেকচারের ব্রাকগ্রাউন্ডে মিউজিক উঠানোর কাজ দ্বিতীয় শিফটে থাকছে না।