সংসদ টিভিতে শিডিউল সংকটে পিছিয়ে গেল প্রাথমিকের ক্লাস

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও স্টুডিও এবং টেকনিশিয়ান না পাওয়ায় সময়মতো ক্লাস রেকর্ডিং করতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। অন্যদিকে সংসদ টিভিতে চলমান মাধ্যমিকের সঙ্গে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচারের সময়ের সমন্বয় করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব কারণে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ রোববার থেকে সংসদ টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হচ্ছে না। এর পরিবর্তে আগামী ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে শুরু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুরুতে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস সম্প্রচার করা হবে। প্রতিদিন প্রতিটি শ্রেণির দুইটি ক্লাস প্রচারিত হবে। ক্লাসের ব্যাপ্তি হবে ২০ মিনিট। সংশ্লিষ্টরা জানান, বড় ধরনের সমস্যা না হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে সংসদ টিভির মাধ্যমে প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। পরের সপ্তাহে মাধ্যমিকের সঙ্গে সমন্বয় করে সকাল ৯টা থেকে ক্লাস শুরু হবে। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তালিকা বাদ দিয়ে জেলাপর্যায় থেকে শিক্ষক এনে ক্লাস রেকর্ডিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেকর্ডিংয়ে সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, মাধ্যমিকে ক্লাস চলায় সংসদ টিভিতে শিডিউল এবং স্টুডিও, ক্যামেরাপারসন ও টেকনিশিয়ান পেতে একটু সমস্যা হওয়ায় ৫ এপ্রিলের পরিবর্তে ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিকের ক্লাসগুলো প্রচার শুরু হবে। তিনি বলেন, দুইটি স্টুডিওতে রেকর্ডিং হলেও এখন সেটি বাড়ানো হয়েছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। প্রথম সপ্তাহ একটু সীমিত পরিসরে হলেও পরের সপ্তাহে মাধ্যমিকের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্লাস সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সকালে প্রচারের চেষ্টা চলছে।         ডিপিই সূত্র জানায়, প্রতিদিন প্রতিটি শ্রেণির দুইটি বিষয়ের ভিডিও ধারণ করা ক্লাস সংসদ টিভির মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে। প্রতিটি ক্লাস হবে ২০ মিনিটের। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে ক্লাস রেকর্ডিং করতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা করে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিরবার থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ের কাজ শুরু হয়। শনিবার থেকে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরোতেও (ব্যানবেইস) রেকর্র্ডিং চলছে। এতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকও সহযোগিতা করছে।  সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে ডিপির কর্মকর্তারও রেকর্ডিং করাতে ভয় পাচ্ছিলেন। তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন, ডিপিই মহাপরিচালক মো. ফসিউলস্নাহ ও এডিজি আ. মান্নানের উদ্যোগে রেকর্ডিং কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন তালিকাভুক্ত মাত্র চারজন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি, রাজধানীর অন্য স্কুলের শিক্ষক দেবজানি দত্ত, ফিরোজ আলম ও মনির হোসেন। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউলস্নাহ বলেন, ৭ এপ্রিল \হ(মঙ্গলবার) থেকে সংসদ টিভির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্ল্লাস শুরু হবে। বিকাল ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। মাধ্যমিকের ক্লাস রুটিন আগেই দিয়ে দেওয়ায় আমাদের বিকালে ক্লাস শুরু করতে হচ্ছে। পরের সপ্তাহে (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই ক্লাস নেওয়া হবে। অভিযোগ রয়েছে, ওই চারজন শিক্ষককে দেখাদেখি তালিকাভুক্ত রাজধানীর অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকরাও  রেকর্ডিংয়ে অংশ নেন। কিন্তু রাজধানীর অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বসিয়ে রেখে রেকর্ডিং কাজে জড়িত না থাকলেও ডিপিইর একজন পরিচালক এবং  প্রেষণে কর্মরত একজন শিক্ষা কর্মকর্তা গাজীপুর জেলা থেকে তিনজন শিক্ষককে হায়ার করে নিয়ে আসেন। ঢাকার শিক্ষককের বাসায় পৌঁছানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। অথচ ডিপিইর গাড়ি দিয়ে গাজীপুর থেকে নিয়মিত আনা-নেওয়া করা হচ্ছে ওই তিন শিক্ষককে। এছাড়া রেকর্ডিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সংশ্লিদের অভিযোগ, দক্ষ শিক্ষকদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে কর্মকর্তাদের পছন্দের অদক্ষ শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, তৃতীয় শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের তৃতীয় অধ্যায় একজন শিক্ষকেরই পড়ানোর কথা। কিন্তু সেখানে কয়েকজন শিক্ষকের পাঠদান রেকর্ডিং করা হচ্ছে। রেকর্ডিং-এ সমন্বয়হীনতারও অভিযোগ করেছেন তারা। ডিপিইর ডিজি ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতাও রয়েছে।  সব মিলিয়ে দায়সারা রেকর্ডিং চলছে। এতে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। তারা দ্রম্নত মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। সমন্বয়হীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই ডিজি মো. ফসিউলস্নাহ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায়  কিছু সমস্যা আছে। চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ চলছে। সমস্যা থাকবে না। বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট করা হয়নি। একটা খসড়া বাজেট তৈরি করা হয়েছে। তা খুবই নগণ্য। শিক্ষকদের খাওয়া, যাতায়াতের খরচ বাবদ প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সব মিলিয়ে ক্লাস প্রতি ২০-২২ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। এখানে কাউকে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। উলেস্নখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জোরাল দাবি তুলেন অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ নিয়ে আজকালের খবরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের গত ১৬ মার্চ সরকার সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দ্বিতীয় দফায় আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পরের দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঈদ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। বন্ধ থাকার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠের মধ্যে রাখতে সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।