১৪ দিন পার হলেও আতঙ্ক কাটেনি টোলারবাগবাসীর

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

তানভীর হাসান
কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়সীমা ১৪ দিন পার হলেও আতঙ্ক কাটেনি রাজধানীর টোলারবাগের বাসিন্দাদের মাঝে। বরং দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সেখানে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা করা হলেও তাদের অনেকে পরিস্থিতির কারণে গোপনে এলাকা ছেড়েছেন। এ অবস্থায় ওই এলাকার ২৫ হাজার বাসিন্দার চোখে-মুখে চরম উৎকণ্ঠার ছাপ। শনিবার ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সাথে কথা বলে চিত্র পাওয়া গেছে। গত ২১ ও ২২ মার্চ এই আবাসিক এলাকায় পাশাপাশি দুটি ভবনে করোনা আক্রান্ত হয়ে দুইজন মারা যাওয়ায় পর এলাকাবাসী ওই এলাকা লকডাউন করেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। জানা গেছে, গত ২১ মার্চ অধ্যাপক মো. ইসলাম গণি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি অবসর নেন। বসবাস করতেন উত্তর টোলারবাগ ১ নম্বর গেটের দারুল আমান (১৯/সি-২/১) ভবনের ৭ তলায়। ওই ভবনের দারোয়ান মো. বিপস্নব জানান, ইসলাম গণি মারা যাওয়ার পর থেকেই বাড়ির বাসিন্দারা বাইরে বের হচ্ছে না। প্রশাসন ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে তাদের ১৪ দিন ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা নির্দেশ পালন করে ঘরে অবস্থান করছেন। পাশাপাশি এই এলাকার ৩০টি পরিবারের মধ্য থেকে ৩০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন হলে তারাই সকাল ১০টা থেকে ১১টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বের হতে পারেন। কিন্তু নতুন করে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তারাও বের হচ্ছেন না বললেই চলে। আবার এরই মধ্যে ভবনের কেউ কেউ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন বলেও জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সন্ধানও বের করার চেষ্টা চলছে। গতকাল সকালে উত্তর টোলারবাগে প্রবেশের মূল গেটে গিয়ে দেখা যায়, মূল গেটে তালা দিয়ে বসে আছেন দুই নিরাপত্তা কর্মী। মূল রাস্তায় অস্থায়ী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। জরুরি প্রয়োজনে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন দ্রম্নত কাজ সেরে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। টোলারবাগ গেটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড কমান্ডার নুরু ফকির বলেন, এই আবাসিক এলাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে প্রবেশ ও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াদ জানান, সরকার দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও এই এলাকার মানুষ নিজস্ব প্রক্রিয়ায় লকডাউনের মধ্যে আছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এলাকার রাস্তায় নিয়মিতভাবে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে ১৪ দিন পার হলেও এই এলাকায় নতুন করে করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি। তারপরও এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন। জানা গেছে, ২১ মার্চ মো. ইসলাম গণি মারা যাওয়ার একদিন পর পাশের ভবনের (১৯/সি-২ নম্বর) তৃতীয় তলার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেনও মারা যান। তিনি ওই ভবনের মালিক ছিলেন। গনি ও মোজ্জাম্মেল এক সাথেই চলাফেরা করতেন। এই ভবনের দারোয়ান খায়রুজ্জামান জানান, মোজাম্মেল হোসেন মারা যাওয়ার পর থেকে ওই ভবনের বাসিন্দারা নিচে নামছেন না। টোলারবাগ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর গেটে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি প্রয়োজনে যারা পকেট গেট দিয়ে যাতায়াত করছেন তাদের জন্য গেটেই সাবান-পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যারা রিকশা বা গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করছেন তাদের গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। স্থানীয় স্টেশনারি দোকানদার মোহাম্মদ রশিদ জানান, রাস্তায় কোনো মানুষজন না থাকায় বেঁচা-কেনা নেই বললেই চলে। পেটের তাগিদে দোকান খোলা রাখছি। কিন্তু লোকজন না থাকায় বিক্রি নেই। দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহম্মেদ জানান, উত্তর টোলারবাগের ৪০টি বাড়িসহ মানুষ হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। এছাড়া গোটা টোলারবাগে আরও ৩শ' বাড়ি আছে। সব মিলায়ে আনুমানিক চার হাজার ৫০০ ফ্ল্যাট আছে। প্রতিটি বাসার নিচে 'মানবাতর বক্স' নামে একটি বক্স তৈরি করা হয়েছে। ভবনগুলোর বাসিন্দাদের কারও কিছু প্রয়োজন হলে চিঠি লিখে সেখানে ফেলে রাখেন। পরে সেই চিঠি সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। এ পর্যন্ত ৭০০ চিঠির বিপরীতে ২৫০ জনের চাহিদা পূরণ করেছে স্থানীয়রা। বাকিদের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি মানুষজন যেন বাসায় থাকেন সেজন্য প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। তবে সরকারের নির্দেশ মেনে না চললে প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে বাধ্য হবে পুলিশ।