দুস্থদের কল্যাণে প্রাথমিকের বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাদের বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ টাকা স্বেচ্ছায় অনুদান দিচ্ছেন দুস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৃহস্পতিবার এই টাকা দেওয়ার আদেশ জারি হয়েছে। স্বেচ্ছায় এই টাকা করোনা মোকাবিলার তহবিলে দান করছেন তারা। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষক নেতা, কর্মচারীদের সংগঠন এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায় থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, এটা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করছে। তারাই ভাল বলতে পারবে কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে সংগ্রহ করছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউলস্নাহ বলেন, ক্রান্তিকালে জাতির পাশে দাঁডাচ্ছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষক নেতা, কর্মচারীদের সংগঠন এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ মানুষের সহায়তায় বৈশাখী ভাতার টাকার ২০ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকে বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশের বেশি দিতে চাচ্ছেন। তাদের ইচ্ছাও বিবেচনা করা হবে। মহাপরিচালক আরও জানান, চলতি বছর নববর্ষ বা বৈশাখী উৎসব পালন না করার নির্দেশনা এসেছে। তবে ইতোমধ্যেই অধিদপ্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা বাবদ টাকা ছাড়া হয়েছে। সারাদেশের প্রাথমিকের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা বাবদ ১২০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। তাই বৈশাখী ভাতার একটি অংশ করোনা মোকাবিলায় এবং কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ মানুষের সহায়তায় দান করতে চাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তার ২০ শতাংশ হিসেবে ২৪ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দান করা সম্ভব হবে। এদিকে রংপুরের বিভাগীয় উপপরিচালক দপ্তর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার পাঠানো এক চিঠিতে সব জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, পিটিআই সুপার ইন্সট্রাক্টও, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর এবং শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতার ২০ শতাংশ টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পাঠাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ে। দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব সরকারি অফিস স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনজীবন হয়ে  পড়েছে স্থবির। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নিম্নআয়ের দিনমজুর ও বস্তিবাসীরা। করোনাভাইরাসের কারণে দুস্থ মানুষদের সাহায্যের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতার প্রাপ্ত অংশের ২০% অর্থ সংগ্রহ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) হিসাবের অনুকূলে জমাদান করে জমা রসিদসহ প্রতিবেদন জরুরিভিত্তিতে প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বুধবার রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ  নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অনলাইন সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈশাখী উৎসব ভাতা ২০% অর্থ কর্তন করার সিদ্ধান্তত্ম নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।  অর্থ অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, বর্তমান করোনাভাইরাসের জন্য দেশে এক ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। আমাদের বৈশাখী ভাতার অর্থ তাদের মাঝে বিতরণ করলে কিছুটা হলেও তারা স্বস্তি পাবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সব শিক্ষক সম্মতি জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।