সুনসান নীরবতা ছুটির দিনেও

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ছুটির দিনে হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিলসহ বেড়ানোর জায়গাগুলো। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব উদ্যান-পার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে নগরবাসীর বিনোদনের স্থান হয়ে ওঠা এসব উন্মুক্ত জায়গা এখন নীরব নিস্তব্ধ। শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা, সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা জায়গা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বিকালে মিরপুর ৬ \হচিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া আর কেউই নেই এখানে। অন্য ছুটির দিনগুলো যেখানে মানুষের ভিড়ে রাস্তায় পা রাখার জায়গা থাকে না, সেখানে এখন নেই কোনো পদচিহ্ন। একই অবস্থার দেখা মেলে সংসদ ভবন এলাকায়ও। সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে এসে একাকী বসে থাকতে হবে তা ভাবতেও পারেননি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান। কয়েকদিন ধরে কাজ নেই তার, ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। তাই বিকাল ৫টার দিকে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোড থেকে হাঁটতে হাঁটতে এসেছেন সংসদ ভবনের দক্ষিণ এলাকায়। এসে দেখেন কোনো লোকজন নেই। এমনকি একজন হকারও নেই যে বাদাম কিনবেন! রাস্তার পাশে ইটের সীমানা দেয়ালের ওপর বসে মোবাইল ফোনে এটা-সেটা করে সময় কাটাচ্ছিলেন হাফিজুর। এ সময় ঘুরতে আসা ঝুঁকিপূর্ণ কি না জানতে চাইলে বলেন, কী আর করব, কাজ নেই একদম। বাসায় থাকতেও আর ভালো লাগছে না, তাই আজ সপ্তাহখানেক পর একটু বের হলাম। বিকালে রবীন্দ্র সরোবরে মাত্র দুজন আড্ডা দিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ধানমন্ডি-১৫ নম্বরের বাসিন্দা সাকিবুর রহমান আড্ডা দেন বন্ধুকে নিয়ে। তাদের আশপাশে এমনকি পুরো এলাকায় অন্য কাউকে দেখা যায়নি এ সময়। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করতেই সাকিবুর রহমান বলেন, ছুটির দিনের বিকালে এখানে বসার জায়গা পাওয়া যেত না অথচ এখন পাঁচজন লোকও নেই। আমরা ছাড়া আর দুজন ছিলেন তারা একটু আগে চলে গেছেন। একই অবস্থা রাজধানীর হাতিরঝিলের। রোজ বিকালেই হাতিরঝিলের চার কিলোমিটার সড়কের ফুটপাত-রেস্তোরাঁগুলো লোকে-লোকারণ্য থাকে। অথচ গতকাল বিকালে পুরো হাতিরঝিল ঘুরে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ দেখা যায়, যাদের প্রায় সবাই আশপাশের বাসাবাড়ির। শেষ বিকালে হাতিরঝিলের রাস্তার ফুটপাত ধরে মাস্ক পরে হাঁটছিলেন তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমান। কথা হলে বলেন, আমাদের একটা ২৫/৩০ জনের দল ছিল যারা রোজ সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি করতাম। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ঢাকা শহরকে কেমন এতিমের মতো লাগছে। কোলাহল না হলে আমাদের ভালো লাগে না। আর যারা এখানে হাঁটতে বা শরীর চর্চা করতে আসতেন, তারা এখন ঘরেই এসব করছেন।