করোনা উপসর্গে ৬ জনের মৃতু্য

রবি ও সোমবার এ দু'দিনে ফরিদপুরে দুইজন এবং ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরে একজন করে মোট ছয়জন মারা যান

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জীবাণুনাশক ছিটান সেনাসদস্যরা। ছবিটি সোমবার নবাবপুর এলাকা থেকে তোলা -যাযাদি
জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় বৃদ্ধসহ ছয়জন মারা গেছেন। রবি ও সোমবার এ দু'দিনে ফরিদপুরে দুইজন এবং ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুরে একজন করে মোট ছয়জন মারা যান। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর: ফরিদপুর : জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও লিভারের সমস্যা নিয়ে ফরিদপুরে আরেক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকালে জেলার ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদী ইউনিয়নের রায়পাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান বৃদ্ধ সালাম মাতব্বর (৭০)। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহসিন উদ্দিন বলেন, জ্বর, শাসকষ্ট এবং লিভারের সমস্যা নিয়ে ওই বৃদ্ধ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। সোমবার সকালে তিনি মারা গেলে আমরা খবর পেয়ে তার নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি। রিপোর্ট এলে আমরা নিশ্চিত হতে পারব করোনায় নাকি স্বাভাবিক মৃতু্য। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে মৃত ব্যক্তির পাশের বাড়িতে মালয়েশিয়া থেকে দুই ব্যক্তি এসেছেন। তারা হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন না। এদিকে, জ্বর, কিডনি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। তিনি গত ৪ এপ্রিল শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে ফমেকে ভর্তি হন। মৃত আবু শেখ (৭০) ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চরমুরারদিয়া গ্রামের মৃত হাতেম শেখের ছেলে। তিনি সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টায় মারা যান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল ৯টায় আবু শেখ নামের ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। ওই ব্যক্তি কিডনি, জ্বর-নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে মৃত ব্যক্তির মরদেহ পৃথকভাবে রাখা হয়েছে এবং তার দাফনের বিষয়ে সরকারি আদেশ অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ডা. সাইফুল ইসলাম। হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) : জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুল মজিদ (৮০) নামক এক বৃদ্ধ কৃষকের মৃতু্য হয়েছে। রোববার বিকালে নিজ বাড়ি থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেওয়ার সময় শাকুয়াই মোড়ে ওই বৃদ্ধ মারা যান। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নাজিম উদ্দিন জানান, মৃত ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। তার হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্ট রোগ ছিল। সে কৃষ্ণনগর গ্রামের মৃত ওসন শেখের ছেলে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুনীর আহমেদ জানান, শাকুয়াই বাজারে মারা যাওয়া মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে। সে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টসহ হাঁপানীর রোগী ছিলেন। মৃত ব্যক্তির দাফন নিজ বাড়িতে সম্পন্ন করা হয়েছে। আনোয়ার (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় শিলাইগড়া গ্রামে শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজা মিয়া বাড়ির মৃত আবুল কালামের পুত্র মোহাম্মদ শরীফ (২০) মৃতু্য হলে করোনা সন্দেহে ওই এলাকার ১০ পরিবারকে সাময়িক লকডাউন করেছে প্রশাসন। জানা যায়, উপজেলার শিলাইগড়া গ্রামে রাজা মিয়া বাড়ির মৃত আবুল কালামের পুত্র মোহাম্মদ শরীফ রোববার সন্ধ্যায় গলাব্যথা ও সর্দি কাশিতে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে স্বজনরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টায় তার মৃতু্য হয়। এ খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ করোনা সন্দেহে ওই এলাকার ১০টি পরিবারকে সাময়িকভাবে লকডাউন করে দেয়। ঘটনার পর স্থানীয়রা গ্রামের আশপাশ এলাকার সব সড়ক ও যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। রাতেই আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ ও আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ রাত ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে আশপাশের লোকজনকে সতর্ক করেন। আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ জানায়, যুবকের মৃতু্যর ঘটনা জানার পর দ্রম্নত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। বর্তমানে পুলিশ অবস্থান নিয়ে করোনা সন্দেহে ১০টি ঘর সাময়িক লকডাউন করা হয়। কিশোরগঞ্জ : জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা থেকে সপ্তাহখানেক আগে আসা এক ব্যবসায়ী (৪৫) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সন্দেহে তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তার ডায়াবেটিস ছিল। সুগার কমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপরও যেহেতু এলাকায় একটি আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তাই মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তির ঢাকায় মুদি দোকান রয়েছে। তিনি সপ্তাহখানেক আগে গ্রামের বাড়িতে এসে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রোববার রাতে তিনি জ্বর নিয়ে মারা গেলে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনা আতঙ্ক তৈরি হয়। ভয়ে কেউ তার লাশ দেখতে যাননি। তবে তার নমুনা পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর মনে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম জামান, এলাকাবাসীর মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খবর পেয়ে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। গাজীপুর : জেলার কাপাসিয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ৩৫ বছর বয়সি এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় ওই নারীর মৃতু্য হয়। কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ওই নারীর জ্বর বা সর্দিকাশি ছিল না। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই ওই নারী কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আগে থেকেই ওই নারীর শ্বাসকষ্ট ছিল। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাই আজ তার দাফন সাধারণভাবেই সম্পন্ন হবে। তবে ওই নারীর স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।'