রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণের অপেক্ষায় অসহায়-কর্মহীন মানুষ

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ত্রাণের জন্য রাস্তায় জড়ো হওয়া কর্মহীন মানুষ
করোনাভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) ঠেকাতে সরকার তিন দফায় ২০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এই সময়ের মধ্যে জনগণকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে জীবনের তাগিদে রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণের অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে অসহায় মানুষকে। সোমবার রাজধানীর বেগম রোকেয়া সরণি, মিরপুর ১০, ১৩, ১৪, ভাষানটেক, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামটর, পান্থপথ, মহাখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রধান সড়কগুলোয় অবস্থানরত দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে হতদরিদ্র অসহায় মানুষের জমায়েত। জীবনের তাগিদে বাধ্য হয়েই ত্রাণের আশায় সড়কে বের হয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ছেলের অভাবের সংসারে থাকি। ছেলে হোটেলে কাজ করে। কয়েকদিন ধরে হোটেল বন্ধ। বাসায় কোনো বাজারও নেই। কোনো দোকানি বাকিতে সদাই দিচ্ছেন না। ঘরে ছোট ছোট দুইটি নাতি রয়েছে। তাদের মুখে আহার যোগাতে সকাল থেকেই মহাখালী ফ্লাইওভারে পাশে অবস্থান করছি। সকাল থেকে দুপুর হতে চলল এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি। জানি না আজ কিছু পাব কিনা, নাকি অনাহারেই দিন কাটবে বলে যোগ করেন ওই রহিমা। ঠিক একই কথা জানালেন ভাষানটেকের মূল সড়কে অবস্থানরত সুফিয়া বেগম (৫০)। তিনি বলেন, স্যার আমরা মরে গেলাম। আমরা কোনো ত্রাণ পাচ্ছি না। কমিশনারের এখান থেকে আমাদের নামের তালিকা ও ভোটার আইডি নিয়ে গেলেও কিছুই পাইনি আমরা। যদি দুই কেজি করেও চাল পেতাম তাও ছেলেমেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম। সরকার যে সহযোগিতা দিচ্ছে তার একটুও যদি আমরা পেতাম তাহলে আমাদের এই সমস্যা হতো না বলে জানালেন ভাষানটেক সড়কে অবস্থানরত ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের তালিকা নেওয়া হলেও আমরা কোনো ত্রাণ পায়নি। কমিশনারের লোকজন এসে আমাদের নামের তালিকা ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে গেছেন। জানি না আমরা কবে পাবো ত্রাণ। এ ছাড়া কেউ আমাদের কোনো সহযোগিতা করছেন না কীভাবে বাঁচব জানি না বলেও তিনি উলেস্নখ করেন। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যত লকডাউনে থাকা ঢাকায় দিনমজুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দৈনিক রোজগার করতে না পেরে থমকে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। কর্মহীন এই মানুষগুলো পেটের টানে সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ত্রাণের খোঁজে ছুটছেন রাজধানীর পথে পথে। ত্রাণের চেয়ে মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। কেউ যদি ত্রাণ দিতে আসেন জমায়েতের কারণে ত্রাণ দিতেও পারছেন না। সারাদিন অপেক্ষা করেও দিন শেষে ত্রাণ না পেয়ে শূন্যহাতে অনেকে ফিরছেন বাড়ি। দিন যত গড়াচ্ছে, দুর্ভোগ আরও বেশি হচ্ছে অসহায় মানুষের। তবে রোববার (৫ এপ্রিল) থেকে সরকার থেকে ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি শুরু করলেও নির্দিষ্ট দূরত্ব ও হাতে নগদ টাকা না থাকায় সেটিও সংগ্রহ করতে পারছেন না অনেকে। এ ব্যাপারে ফার্মগেটের দিনমজুর আমান মিয়া জানান, সরকার ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি করলেও সেটি আমরা সংগ্রহ করতে পারছি না। কয়েক মাইল হেঁটে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল আনা সম্ভব না। শুধু তাই নয় হাতে নগদ অর্থ একেবারেই নেই। বিত্তবানদের সহযোগিতা না পেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে এখন সাহায্যপ্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি সড়কেই একটু সাহায্যের আশায় বসে বসে ক্ষণ গুনছেন অসহায় এই মানুষজন। তাদের চাহিদা বেশি নয়, কোনোমতে দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারলেই হয়। সমাজের অসহায় মানুষের পাশে বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর।