করোনা :রোগীদের সেবা দিতে চান হোমিও চিকিৎসকরা

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

জাহিদ হাসান
করোনাভাইরাসের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হওয়ায় এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে চান হোমিও চিকিৎসকরা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই মহামারিতে হোমিও চিকিৎসাশাস্ত্র বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারীরা দেশের জন্য এগিয়ে আসতে চান। একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। দেশে প্রায় ২ হাজার গ্র্যাজুয়েট (স্নাতক) সম্পন্ন হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন। করোনার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। আক্রান্তদের জন্য প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আইসোলেশন (পৃথকীকরণ) ও কোয়ারেন্টিনই (সঙ্গনিরোধ) একমাত্র ভরসা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোমিও সেবায় কোনো ধরনের পার্শপ্রতিক্রিয়া না থাকায় এটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এরই ধারাবাহিকতায় তারা করোনাভাইরাসের উপসর্গ হিসেবে পরিচিত সাধারণ হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বর, গলাব্যথার মতো সমস্যায় ভোগা রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে সক্ষম। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলে চলমান সংকট মোকাবিলায় অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের পাশাপাশি তারাও রোগীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত সেবায় ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে এই চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাবনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (এএমসি) ডা. মো. জাকারিয়া মানিক যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করলেও কোনো ধরনের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। ডবিস্নউএইচও এটিকে মহামারি ঘোষণা করেছে। ভাইরাসটির প্রকোপ মোকাবিলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের হোমিও-ভেষজ চিকিৎসাবিষয়ক আয়ুশ মন্ত্রণালয়কে করোনা চিকিৎসা ও গবেষণায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হোমিও চিকিৎসকদের করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবার অনুমতি দিলে তারাও ভূমিকা রাখতে পারবেন। জানা গেছে, বাংলাদেশে হোমিও চিকিৎসায় এমবিবিএস সমমর্যাদার 'ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি' (বিএইচএমএস) ডিগ্রিধারী অন্তত দুই হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। যারা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির সেবা দিচ্ছেন। গাজীপুরের ভাওয়াল হোমিও ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. ইখতিয়ার হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, যুগে যুগে মহামারিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছে তাই দেশের এই সংকটকালীন অবস্থায় স্বল্পখরচের হোমিও চিকিৎসাকে কাজে লাগাতে পারলে বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ অনেক উপকৃত হবে। মিরপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার কর্তৃক সে দেশের আয়ুশ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বিভিন্ন আদেশ দেখেছি। যতটুকু জেনেছি সেখানকার চিকিৎসকরা এই রোগের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। তবে দেশে প্রায় ২ হাজার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী হোমিও চিকিৎসক সেবাদানের জন্য প্রস্তুত থাকলেও সরকারিভাবে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজে প্রয়োজনীয় পিপিই দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মেডিকেলের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। তারা বলছেন, যেহেতু করোনা চিকিৎসায় নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্টসহ মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- হোমিও পদ্ধতিতে এমন রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হোমিও বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে মার্স ও সার্চ গোত্রীয় নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রথম দেখা দেয়। যেটির প্রার্দুভাব পর্যায়ক্রমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ধ্বংসলীলা শুরু করতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশে এই ভাইরাসে রোববার পর্যন্ত ৮৮ জন সংক্রমিত ও ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আক্রান্তদের সেবায় দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। অথচ হোমিওতে ঠান্ডা, জ্বর, কাশির চিকিৎসায় স্বীকৃত আরসেনিক এলবাম থারটি (৩০) নামক মেডিসিনটি বেশ কার্যকরিতা পাওয়া যাচ্ছে। ওষুধটি সেবন করে সিজনাল ফ্লু জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের সুস্থ হওয়ার প্রমাণ মিলছে। তাই সরকারি নির্দেশনা পেলে হোমিও চিকিৎসকরাও চলমান সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হোমিও ও দেশজ স্বাস্থ্য শিক্ষা) ডা. এফবিএম আব্দুল লতিফ যায়যায়দিনকে বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসরণ করে বাংলাদেশেও সিঙ্গেল প্রটোকল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। তবে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার বা এএমএসি চিকিৎসার বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের তাদের করণীয় ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া ও হোমিও মেডিকেল কলেজে একটি কর্নার খোলা হয়েছে। এখন ভারতীয় আয়ুশ মন্ত্রণালয়ের মতো দেশে হোমিও চিকিৎসা নির্দেশনা পেলে রোগীদের সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। হোমিও চিকিৎসার কলেবর বাড়াতে মিরপুরে অবস্থিত সরকারি ও গুলিস্তানে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বিএইচএমএস ডিগ্রি পাস করে বের হচ্ছেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক চিকিৎসক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এমএমসি) শাখায় সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। যারা দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা হেলথ কমপেস্নক্সে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী দেখছেন। পাশাপাশি হোমিও বিষয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার ডিপেস্নামা পাস চিকিৎসক সারাদেশে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।