টাঙ্গাইল, হবিগঞ্জ লকডাউন কুষ্টিয়ার প্রবেশপথ বন্ধ

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টাঙ্গাইল ও হবিগঞ্জ জেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং কুষ্টিয়া জেলায় প্রবেশের তিনটি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সার্কিট হাউসে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে টাঙ্গাইল জেলা লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য জেলার সঙ্গে টাঙ্গাইলের যেসব সংযোগ সড়ক রয়েছে, এসব সড়ক বন্ধ করে তলস্নাশি চৌকি বসানো হবে। একমাত্র রোগী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কোনো যানবাহন বা লোকজন যাওয়া-আসা করতে পারবেন না। ডিসি বলেন, টাঙ্গাইলের দক্ষিণে গাজীপুর ও উত্তরে জামালপুর জেলা ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মাঝখানে রয়েছে টাঙ্গাইল। এই জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত লকডাউনে থাকবে টাঙ্গাইল। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, স্থানীয় এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মোহাম্মদ সোহেল রানা, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, সিভিল সার্জন মো. ওয়াহীদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোশারফ হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদ উলস্নাহ ও পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান। হবিগঞ্জ জেলা 'লকডাউন' ঘোষণা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবিলায় হবিগঞ্জ জেলাকে 'লকডাউন' ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে এই প্রথম কোনো জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলো। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি প্রতিরোধে মঙ্গলবার এই জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনার কারণে সৃষ্ট সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই জেলার গ্রামে গ্রামে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির ছাড়াও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উলস্ন্যা, সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কুষ্টিয়া প্রবেশের ৩ সড়ক বন্ধ ঘোষণা এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া জেলায় প্রবেশের তিনটি সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত এ তথ্য জানান। সড়কগুলো হচ্ছে- চুয়াডাঙ্গা থেকে কুষ্টিয়া প্রবেশের দুটি ও রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়ায় ঢোকার একটি সড়ক। বন্ধ করা হয়েছে কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ির হালশা এলাকা ও মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ সড়ক সীমান্ত। আর রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়ায় প্রবেশের কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের খোকসা উপজেলার শিয়ালডাঙ্গী এলাকাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই তিন সড়ক দিয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় কোনো গাড়ি বা মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও রাজবাড়ী জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ জন্য তিন স্থানে পুলিশ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ অতি জরুরি সেবা এর আওতামুক্ত থাকবে। এলাকাবাসী 'লকডাউন' করেছে বাসাবো গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর বাসাবো এলাকায় করোনা আক্রান্ত হন একই পরিবারের ছয়জন। এরপর থেকেই পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। কিন্তু সেই আতঙ্ককে পাশ কাটিয়েই 'অযথা' অনেকেই বেরিয়ে পড়ছিলেন ঘর থেকে। সেসব ঠেকাতে সোমবার থেকে অঘোষিত লকডাউন করা হয়েছে বাসাবো এলাকাকে। মঙ্গলবার সরেজমিন বাসাবো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনের অপেক্ষা না করেই এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। বাঁশ আর দড়ি দিয়ে তারা রাস্তা আটকে রেখেছেন। আর তাদের এই কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মঙ্গলবার উত্তর বাসাবো এলাকার সাত নম্বর সড়কে গেলে দেখা যায়, এলাকাবাসী বাঁশ আর দাড়ি দিয়ে সড়কে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। অপরিচিত কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে যারা বের হতে চাচ্ছেন, তাদেরও সম্মুখীন হতে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের। আর যান চলাচল তো সম্পূর্ণ বন্ধ। এদিকে, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুদি দোকান খোলা থাকার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। যার কারণে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুদি দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্বও এখানে সঠিকভাবে পালন করা হয়নি। এ বিষয়ে উত্তর বাসাবো এলাকার মুদি দোকানদার সেলিম বলেন, আগে তো সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকত। এখন ২টায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আগে ঘণ্টায় ১০ জন কাস্টমার আসলে, এখন সেখানে ৩০ জন হচ্ছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব মানানোটাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমার দোকানের সামনে বৃত্ত এঁকে রেখেছি। কুমিলস্নার বুড়িচংয়ে দুটি বাড়ি 'লকডাউন' করোনা সন্দেহে কুমিলস্নার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের জিয়াপুর গ্রামের দুটি বাড়ি 'লকডাউন' করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরুল হাসান পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে জিয়াপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী ও তার ভাইয়ের বাড়ি লকডাউন করেন। এর আগে গত রোববার রাত ১১টার দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ওই ব্যবসায়ীর মায়ের (৬৫) মৃতু্য হয়। পরে সোমবার ওই ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে বুড়িচংয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরুল হাসান।