শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল-কলেজের টিউশন ফি মওকুফ করার দাবি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রায় একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করার চিন্তাভাবনা করছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে সন্তানের টিউশন ফি দেয়ার মতো অনেকের সমর্থ নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক। তাই তারা টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছেন।

রাজধানীর একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে গত মাসের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে কর্মস্থল বন্ধ হয়ে গেছে। জমানো অর্থ দিয়ে কোনোমতে দিন পার করতে হচ্ছে, সেটাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কারো কাছে গিয়ে হাত পাততে পারি না। লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের চাল কিনে খেয়ে দিন পার করছি।

তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন। কবে এ পরিস্থিতিতে থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তা কেউ বলতে পারছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সন্তানের স্কুলের মাসিক বেতন দেয়ার সমর্থ নেই অনেকের। তাই আমাদের পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে মানবিকভাবে সংকটময় পরিস্থিতির দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মাফ করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানান অভিভাবকরা।

জানতে চাইলে রাজধানীর সুমানধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফৌজিয়া বুধবার বলেন, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন হয়ে থাকে। এ বাবদ প্রতিমাসে প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকার প্রায়োজন হয়। সংকটময় পরিস্থিতিতে টিউশন ফি ছাড় দেয়ার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে মানবিকভাবে এমন পরিস্থিতিতে দুই বা একমাসের বেতন মাফ করা যেতে পারে। বিষয়টি আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর গভর্নিং বডির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এই অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে বেশি অসুবিধায় রয়েছেন তাদের সার্বিক সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সমস্যাগুলো অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। কেউ সমস্যায় থাকলে তার কাছে মাসিক বেতন দিতে চাপ দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে তাই এটি মাফ করলে প্রতিষ্ঠান চালাতে অসুবিধা হয়ে যাবে। মানবিকভাবে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। গভর্নিং বডি যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ড. উম্মে সালেমা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে ঠিক আছে, তবে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন কোনো কিছু মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে এখনো আসেনি। টিউশন ফি মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হলে তা মেনে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গালর্স হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সাহাব উদ্দিন মোলস্না বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষের সমর্থ না থাকলে তারা সন্তানের টিউশন ফি দেবে কিভাবে? বিষয়গুলো বিবেচনা করে সেভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের টিউশন ফি বিষয়ে চাপ দেয়া হবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সব খাতে সরকারকে প্রণোদনা দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফারহাদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে মূলত টিউশন ফি বেতন বা অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু এটি একটি বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সুতরাং আমাদের প্রত্যেক মাসে কোটি টাকার ওপর খরচ আছে। সবকিছু মিলিয়ে আসলে টিউশন ফি বেতন মওকুফের সিদ্ধান্ত আমাদের এখন পর্যন্ত হয়নি। আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

টি অ্যান্ড টি আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালযয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা ফেরদৌসী খান বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত এ জাতীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এখন হচ্ছে এমন একটি সময়, এখন সবাই আলস্নাহ আলস্নাহ করেন। আগে মানুষ বাঁচুক, তারপর বাকি সব সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আমাদের কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই, সিদ্ধান্ত নেব কীভাবে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

নীলক্ষেত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। আর এখন পর্যন্ত টিউশন বেতন মওকুফের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক চৌধুরী বুধবার বলেন, করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি'র বড় পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বেশি দিন বন্ধ রাখতে হয় তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95786 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1