করোনা উপসর্গে ১০ জনের মৃতু্য

গাইবান্ধায় শিশু, জামালপুরে নারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূ, ফেনীতে বৃদ্ধ লক্ষ্ণীপুরে যুবক, নরসিংদীতে পোশাক শ্রমিক, বরিশালে যুবক, পাবনায় নারী ও নোয়াখালীতে ইতালিপ্রবাসী যুবক মারা যান

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা উপসর্গ সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ১০ জেলায় গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার শিশুসহ ১০ জন মারা গেছেন। গাইবান্ধায় শিশু, জামালপুরে নারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূ, ফেনীতে বৃদ্ধ, লক্ষ্ণীপুরে যুবক, নরসিংদীতে পোশাক শ্রমিক, বরিশালে যুবক, পাবনায় নারী ও নোয়াখালীতে এক ইতালিপ্রবাসী যুবক মারা যান। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর- গাইবান্ধা : জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক শিশুর (১১) মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার একটি গ্রামে তার মৃতু্য হয়। শিশুটির স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা-মা ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সে গ্রামের বাড়িতে থাকত। কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে শিশুটির বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপর থেকেই তার সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না তা নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মজিদুল ইসলাম বলেন, মৃতু্যর পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে একটি দল শিশুটির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। জামালপুর : জেলার ইসলামপুর উপজেলায় জ্বর-সর্দি নিয়ে এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। উপজেলার সভারচরে শুক্রবার সকালে নিজ বাড়িতে ২৮ বছর বয়সী ওই নারী মারা যান। ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম এ তাহের বলেন, 'ওই নারী ক্যানসারে ভুগছিলেন। জ্বর ও সর্দি নিয়ে তার মৃতু্য হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।' ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী এক গৃহবধূর মৃতু্য হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রাণীখার গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। এ ঘটনায় গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে রাণীখার গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন। তিনি কয়েকদিন ধরেই জ্বর,সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফারুক মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে রাণীখার গ্রামের নিজ বাড়িতে আসার পর থেকেই ওই গৃহবধূ জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। কিন্তু ভয়ে তার অসুস্থতার কথা কাউকে জানাননি। গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই গৃহবধূ মারা যান। সোনাগাজী (ফেনী) : ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক ব্যক্তির (৬৫) মৃতু্য হয়েছে। এটি ফেনীর প্রথম কোনো করোনা উপসর্গের ব্যক্তি। তিনি ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর এলাকার মামুন প্রফেসরের (আবদুলস্নাহ মৌলভীর) বাড়ির বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত আবুল খায়ের। এ ঘটনায় স্থানীয় জন-সাধারণের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফাজিলপুর ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহমুদুর নবী বাবর জানান, ১৩/১৪ দিন আগে নুরনবী ও তার ছেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি মাছের আড়তে কাজ করতেন তারা। বাড়িতে আসার পর থেকে তারা জ্বর ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, 'আমরা যখন খবর পেয়েছি তখন ওই ব্যক্তির অবস্থা কিছুটা সংকটাপন্ন ছিল। তখনই ওই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নিয়ে ভেন্টিলেটর দেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের বাধার মুখে অ্যাম্বুলেন্স ফিরে আসে। তার নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে তার মৃতু্য হয়।' কমলনগর (লক্ষ্ণীপুর) : লক্ষ্ণীপুরের কমলনগরে করোনা উপসর্গ জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আশরাফ উদ্দিন (২৫) নামে এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। এ মৃতু্যতে প্রশাসন ৫ পরিবারকে লকডাউন করে। বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) রাতে উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্বশুরবাড়িতে তার মৃতু্য হয়। ওই যুবক ভোলা জেলার বাসিন্দা। থাকতেন শ্বশুরবাড়িতে। কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল করিম রাজিব বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ওই যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি হয়। কিছুটা সুস্থ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনরা তাকে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার রাতে ডায়রিয়ার সঙ্গে তার জ্বর দেখা দিয়ে মৃতু্য হয়। তার মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। নরসিংদী : নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরা সুলতানা বেগম (৩০) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্ট শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আলোকবালী পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। তিনি ওই গ্রামের আমানুলস্নাহর স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীর চরাঞ্চলের বাড়ি ফিরেন ওই নারী। সকালে ঠান্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে নৌকাযোগে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। খবর পেয়ে মৃত ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে আশপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ইমরুল কায়েস। আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃতু্য হয়েছে। ১৬টি বাড়ির প্রায় ৫০০ পরিবারকে লকডাউন করেছে প্রশাসন। বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বাগধা গ্রামের সোহরাব মিয়ার পুত্র গোল্ডেন লাইন পরিবহণের সুপারভাইজার আলী আকবর করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪/৫ দিন আগে বাড়িতে এসেছিলেন। তার অসুস্থতার খবর গোপন রেখে বাজার থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছে এবং উন্মুক্ত ঘোরাফেরা করলেও সে হাসপাতালে যায়নি। বুধবার দুপুরে করোনা উপসর্গ জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আলী আকবরের মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় বুধবার আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন ১৬টি বাড়ির প্রায় ৫০০ পরিবারকে লকডাউন করেছে। উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, আলী আকবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতু্য হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে। পাবনা : পাবনায় সাঁথিয়ায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথাসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে ছুম্মা খাতুন (৫০) নামের এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। মৃত ছুম্মা খাতুন উপজেলার ধূলাউড়ি মধ্যপাড়া গ্রামের মো. আবু বক্কারের স্ত্রী। বিকেলে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুসারে সুরক্ষা পোশাক পরিহিত স্বেচ্ছাসেবক দল ওই নারীর দাফন সম্পন্ন করে। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমেদ জানান, পেশায় ভিক্ষুক ওই নারী বেশ কিছুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যাওয়ায় আমরা বাড়িটি লকডাউন করেছি। সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা তুজ জান্নাত জানান, এর আগে তার বিষয়টি জানতে পেরে করোনা সন্দেহে গেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছুম্মা খাতুনের নমুনা সংগ্রহ করে বুধবার সকালে পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত করোনায় মৃতু্য হয়েছে কি না নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়। সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী): নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে এক ইতালিপ্রবাসীর মৃতু্য হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার বাড়িসহ দুটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এছাড়া জেলা শহরের লক্ষ্ণীনারায়ণপুর এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সুধারাম থানা-পুলিশ ওই বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়। জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বুধবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরেছেন। নারায়ণগঞ্জে এখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ খুব বেশি। তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ইতালিতে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেন। তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বুধবার বিকেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। এ অবস্থায় তাকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। ফলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। পথে তার মৃতু্য হয়।