জামাই-শাশুড়ির চোরচক্র

প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

তানভীর হাসান
রাজধানীর আদাবরের একটি মাদক স্পটে ইয়াবা কিনতে গিয়ে ধরা পড়ে আরিফুল ইসলাম মোরাদ। তার কাছে পাওয়া যায় তিনটি মোবাইল ফোন। দামি ফোনগুলো তার নয় বলে সন্দেহ হয় পুলিশের। এরপর সেগুলোর কল লিস্ট থেকে বিভিন্ন নম্বরে কল করা হয়। একটি কল রিসিভ করেন সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, এটি তার এক ঘনিষ্ঠজনের মোবাইল ফোন নম্বর। এই তথ্যসূত্র ধরে জীবন বিমা কর্মকর্তা ও শিক্ষকের বাসায় চুরির দুটি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে শাহ আলী থানা পুলিশ। উদ্ধার হয় চুরি করা মালপত্র। চুরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মোরাদের শাশুড়ি রহিমা বেগমকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শাহ আলী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোরাদ চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ছয়-সাতটি মামলা রয়েছে। সে ও তার স্ত্রী পারুল বেগম দুজনই মাদকাসক্ত। পারুলকে আলাদা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে আদাবর থানা পুলিশ। চোরাই মালপত্র লুকিয়ে রাখতেন রহিমা। তার বাসা থেকেই দুই জায়গায় চুরির মালপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত সূত্র জানায়, ৮ মার্চ সকালে আদাবর থানার এএসআই রাসেল লস্কর চোরাই মোবাইল ফোন রাখার অভিযোগে মোরাদকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রথমে সে সব কিছু অস্বীকার করে। তবে তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনের সূত্রে জানা যায়, ফোনটির মালিক জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মামুনুল হাসান। তিনি থাকেন শাহ আলীর বি-বস্নক এলাকায়। তাকে কল করে পুলিশ জানতে পারে, তার বাসার গ্রিল কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনি শাহ আলী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এসআই রবিউল ইসলাম জানান, চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর আদাবর থানায় আটক মোরাদকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে সে সবকিছু অস্বীকার করে। আদাবরে দুটি ভাড়া বাসায় সে, তার স্ত্রী ও তার বাবা-মা থাকেন। ওই বাসা দুটিতে তলস্নাশি চালিয়ে কিছুই পায়নি পুলিশ। একপর্যায়ে রোববার বিকালে শাহ আলীর সরকারি 'গ'-বিল্ডিংয়ের পেছনের বস্তিতে মোরাদের শাশুড়ি রহিমা বেগমের ঘরে তলস্নাশি চালানো হয়। এ সময় রহিমা দাবি করেন, মেয়ে-জামাতার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের স্বভাব ভালো নয় বলে তিনি কোনো যোগাযোগ রাখেন না। মুখে এমনটা বললেও দেখা যায়, তার ঘরেই রাখা হয়েছে সব চোরাই মালপত্র। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ, চারটি মোবাইল ফোন, স্বর্ণের আংটি, দামি হেডফোন, ক্যালকুলেটর, চার্জার লাইট ও প্রেশার কুকার। এগুলো বিমা কর্মকর্তার বাসা থেকে চুরি করা হয়েছিল। চুরির আরও তথ্য পেতে সোমবার মোরাদকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃদ্ধা রহিমাকে পাঠানো হয় কারাগারে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে মোরাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবারও রহিমার ঘরে তলস্নাশি চালিয়ে একটি স্বর্ণের চেইন ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সেই ফোনে থাকা সিমকার্ডটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের। তার সঙ্গেও পরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, কয়েক দিন আগে সিমকার্ডসহ তার মোবাইল ফোন চুরি হয়। তবে তার দেওয়া বর্ণনায় বোঝা যায়, জব্দ করা মোবাইল ফোনটি তার নয়। চুরি করা ফোনটি বিক্রি করে দিয়ে ওই সিমকার্ড আরেকটি সস্তা ফোনে তুলে রেখেছিল মোরাদ। আরও কয়েকটি চুরির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার আভাস পাওয়া গেলেও জিজ্ঞাসাবাদে সে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি। মূলত ইয়াবা সেবনের টাকা সংগ্রহ করতেই সে বিভিন্ন স্থানে চুরি করত। আর চোরাই মালপত্র রেখে তাদের সহায়তা করতেন রহিমা। এর বিনিময়ে তিনিও কিছু টাকা পেতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোরাদকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।