বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পণ্য খালাস বন্ধ

চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় অচল

বুধবার বন্দর চত্বরে কন্টেইনার ছিল ৪৮ হাজার ১৭৫ টিইইউএস যেখানে ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর

আমদানিকারকরা পণ্য খালাস না করায় পণ্যবোঝাই কন্টেইনারে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। ধারণক্ষমতা প্রায় ছুঁয়ে যাওয়ায় জাহাজ থেকেও নামছে না পণ্য। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর অচল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি, অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রাংশ, খাদ্যপণ্য ও ওষুধের কাঁচামালসহ দেশের মোট ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি হয় এই বন্দর দিয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির প্রভাবে প্রায় ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয়ের যোগানদাতা তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় এবং কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা পণ্যের তেমন চাহিদা নেই।

উপরন্তু মহামারির কারণে আমদানি পণ্য বন্দর থেকে নেওয়ার জন্য পরিবহণেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং ব্যাংক খোলা রাখার সময় কমে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, বুধবার বন্দর চত্বরে কন্টেইনার ছিল ৪৮ হাজার ১৭৫ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার এক একক), যেখানে ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। তার আগের দিন বন্দর চত্বরে কন্টেইনার ছিল ৪৭ হাজার ৪১৩ টিইইউএস। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৯০৫টি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে।

জেটিতে থাকা জাহাজগুলো থেকে কন্টেইনার নামিয়ে রাখার মতো তেমন খালি জায়গা নেই বন্দর চত্বরে। ফলে অপেক্ষমাণ কন্টেইনারবাহী জাহাজের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বুধবার বন্দরে জেটিতে কন্টেইনারবাহী জাহাজ ছিল নয়টি; বহির্নোঙ্গরে কন্টেইনার নিয়ে অপেক্ষমাণ ছিল ৩১টি।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরকে সচল রাখতে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমদানিকারকরা সক্রিয় হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। বেশিরভাগ আমদানিকারক পোশাক শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট।

আপাতত বিকল্প হিসেবে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে (আইসিডি) সব ধরনের পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে খালাসের ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

'আইসিডিগুলোতে এখনো ১৫ হাজার কন্টেইনার রাখার মতো জায়গা আছে। ১৫ হাজার কন্টেইনার খালি হলে বন্দর চত্বরে জাহাজ থেকে কন্টেইনার দ্রম্নত গতিতে নামানো সম্ভব হবে। তখন আর জাহাজকে বেশিদিন অপেক্ষায়ও রাখতে হবে না, কন্টেইনার জটও হবে না।'

বিদ্যমান ব্যবস্থায় ১৯টি আইসিডিতে ৩৮ ধরনের কনটেইনার পণ্য খালাস করা যায়। সব পণ্যের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে চেষ্টা চলছে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

মহামারির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল। ছুটি শুরুর পর গত তিন সপ্তাহে ক্রমাগত বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়া কমতে থাকে। পণ্যের ডেলিভারি নিতে উৎসাহিত করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে মাশুল মওকুফ করে দিয়েছে।

পণ্যের ডেলিভারি নেই কেন

আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকদের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে পণ্য আনা-নেওয়াসহ বন্দরকেন্দ্রিক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা। তাদের সমিতি বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএফএফএ)।

পর্যাপ্ত গাড়ি চলাচল না করা, ব্যাংক খোলা রাখার সময় কমে যাওয়া এবং শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে বিএএফএফএর সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম) অমির শঙ্কর বর্মন জানান।

তিনি বলেন, 'ঈদের ছুটির সময়ও যখন গাড়ি কম চলে তখন কন্টেইনার জমে যায়। এখন দীর্ঘ সাধারণ ছুটি চলছে। রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে যেসব গাড়ি আসে সেগুলোও খুব কম আসছে। ফলে আমদানি কন্টেইনার পাঠানোর জন্য গাড়ির সংকট প্রকট।'

'পণ্য ছাড় করাতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে ব্যাংকে যেতে যেতে ব্যাংকিং আওয়ার শেষ হয়ে যায়। নগরীতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সিঅ্যান্ডএফ স্টাফরাও নানা বাধা পেরিয়ে স্বল্প ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারছেন না।'

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পণ্যবাহী পরিবহণ চলাচলের সংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং আওয়ার বাড়িয়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা রাখার পক্ষে মত দেন অমিয় শঙ্কর।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এখন চত্বরে যেসব কন্টেইনার আছে তার মধ্যে বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি, যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার টিইইউএস। তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় এসব পণ্য তারা নিতে পারছেন না।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, 'কারখানাগুলো পুরোপুরি বন্ধ থাকায় স্টোর ও কমার্শিয়াল বিভাগও বন্ধ। এ দুই বিভাগ খোলা না থাকায় আমদানি পণ্য নিতে পারছেন না অনেকে।'

তিনি বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর কন্টেইনার পরিবহণকারী কাভার্ডভ্যানসহ অন্য যানবাহনের অনেক চালক-সহকারী কাজে যোগ দিতে পারেনি। শুল্ক বিভাগের কাজ শেষে ব্যাংকে গিয়ে খোলা পাওয়া যায় না। এসব সমস্যার কারণে আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারির পরিমাণ কমে গেছে।

'ফরেন এক্সচেঞ্জ হয় ব্যাংকের এমন শাখাগুলো বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। পাশাপাশি পরিবহণ চালক-সহকারীদের যোগদান এবং সড়কে কোনো বাধা না থাকলে কন্টেইনার ডেলিভারি বাড়বে।'

নভেল করোনাভাইরাসের জন্য ছুটির মধ্যে ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা কমিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। সকল শাখার জন্যই এই সময় প্রযোজ্য।

বন্দরের মাশুল মওকুফ করাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি শিপিং এজেন্টদের ডেমারেজ চার্জও মওফকু করার আহ্বান জানান।

জাহাজ থেকে নামানোর পর বন্দর চত্বরে প্রথম চারদিন বিনা মাশুলে কন্টেইনার রাখা যায়। এরপর প্রথম সপ্তাহ প্রতিদিন ছয় ডলার করে, দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিদিন ১২ ডলার করে এবং তৃতীয় সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ডলার করে প্রতি কন্টেইনারের জন্য মাশুল দিতে হয়।

বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় বাড়লেও বৈশ্বিক মহামারির কারণে এখনো কোনো মাশুল ধরছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

আইসিডিতে কন্টেইনার নিয়ে পণ্য খালাসের বিষয়ে এই বিজিএমইএ নেতা বলেন, 'কন্টেইনার যেখানেই নিয়ে যাই আমাদের তো ডেলিভারি নিতেই হবে। সব সদস্য প্রতিষ্ঠানকে বিজেএমইএর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে তাদের পণ্য ডেলিভারি নিতে বলা হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<96445 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1