চড়েছে ছোলা-চিনি পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে রোজার মাস। আর প্রায় সপ্তাহখানেক বাদেই সংযম সাধনা শুরু করবেন মুসলিমরা। তবে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য সঙ্কুচিত হলেও বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ছোলা, খেসারির ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ রোজার প্রয়োজনীয় পণ্য। দাম বৃদ্ধিতে করোনাভাইরাসকেই কারণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন বিক্রেতারা। শনিবার মালিবাগ বাজার, মালিবাগ রেলগেইট বাজার, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৮০-৮২ টাকা আর খেসারি ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ ফেব্রম্নয়ারি মাসেও প্রতি কেজি ছোলা ৬৫-৭০ এবং খেসারি ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। শান্তিনগরের মুদি দোকানি সাইদুল ইসলাম বলেন, '২০ দিন যাবৎ প্রতি কেজি ছোলা ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে রোজা বলেই দাম কিছুটা বাড়তি। আগে আমরা ৭০-৭৫ টাকায় এটি বিক্রি করতাম। রোজার কারণে খেসারির চাহিদাও বেশি। করোনায় সাপস্নাই সেভাবে হচ্ছে না, সেজন্য দাম বেড়েছে।' সার্কিট হাউজ রোডের বাসিন্দা পিডিবির প্রকৌশলী রাবিকুল ইসলাম শান্তিনগরে বাজার করতে এসেছেন সকালে। তিনি বলেন, 'রোজা আসছে, তাই ছোলা, খেসারি, বুটের ডাল, বেসন, ডাবরি ইত্যাদির তালিকা দিয়েছেন গিন্নি। কিনতে এসে দেখছি সবগুলোরই দাম বেশি।' রোজার সময়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াটা গা-সওয়া হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কিছু করার নেই তো ভাই। পত্র-পত্রিকায় লিখেও কোনো লাভ হয় না, হা-হুতাশ করলেও কিছু হবে না। দেখেন না, ছোলার দাম এক মাস আগেও ছিল ৬৫-৭০ টাকা কেজি। এক লাফে এখন ৮০ টাকা। এটাকে আপনি কী বলবেন?' অথচ শান্তিনগরের বাজারের কাছেই রাস্তার এক পাশে টিসিবি ডিলারের ট্রাকে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছিল ৬০ টাকায়, মসুর ৫০ টাকায়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়ানো ঠেলাচালক করিম বলেন, মুদির দোকানে ছোলা-মসুরের অনেক দাম বেশি। তাই টিসিবির ট্রাক থেকে কিনছেন। তিনি আরও বলেন, 'আপনেই কন, সরকার যদি ৬০ টাকায় ছোলা দিতে পারে তাহলে ওরা ক্যান ৮০ টাকায় বিক্রি করব? ক্যান মসুর ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি করব? দেশটা একটা মগের মুলস্নুক হইছে।' একই অবস্থা চিনির দামেও। টিসিবির প্রতি কেজি চিনির ৫০ টাকা হলেও বাজারে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজায় ইফতারিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় যে পেঁয়াজ, তার দামও বেড়েছে আবার। গত বছর পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরুর পর এর দাম চড়তে চড়তে ডিসেম্বরে কেজি প্রতি ৩০০-৩৫০ টাকায় উঠে যায়। এরপর এ বছর ফেব্রম্নয়ারি থেকে বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পর দাম কমতে শুরু করে। সে সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকায় নেমে আসে। মার্চে আরও কমে ৭০-৭৫ টাকা হয়। গত তিন দিন আগেও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু একই পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ রেলগেইট বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. মমিন বলেন, 'রোজা সামনে বলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। আমার মনে হয়, দাম আর বেশি বাড়বে না। স্যার, রমজান মাস তো, একটু লাভের জন্য এই দাম বেড়েছে। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য নাই। একটু লাভ না করলে খামু কী? বাজারও দুপুর ২টার পর বন্ধ।' ইফতারের আরেকটি অনুষঙ্গ খেজুরের দামও আকাশচুম্বি। নানা ধরনের খেজুর উঠেছে বাজারে। খেজুর মানভেদে ৫০০ থেকে ২৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীতে।