বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-না'গঞ্জ-গাজীপুর থেকে উত্তরাঞ্চলে লোক আসছেই

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও লকডাউন অমান্য করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এখনো উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে ফিরছে মানুষ। কেউ মধ্যরাতে মাইক্রোবাস বা অ্যাম্বুলেন্সে, আবার কেউ পণ্যবাহী ট্রাকে ত্রিপল টানিয়ে ভেতরে বসে চলে আসছে গ্রামে। নদীপথেও আসছে কেউ কেউ। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে ফেরা লোকজনকে নিয়ে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে গ্রামে গ্রামে। স্থানীয় প্রশাসন সদ্য গ্রামে ফেরত লোকজনের বাড়িতে তালা মেরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করছে। একই সঙ্গে উড়ছে লাল পতাকাও। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কগুলোতে নানাভাবে ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রী চলাচল ঠেকানো হচ্ছে। কিন্তু লোকজন নানা কৌশলে ও ছোট ছোট সড়ক ব্যবহার করে গ্রামের ভেতর চলে আসছে।

রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার একেএম তরিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রধান সড়কগুলোতে আমরা ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রী চলাচল বন্ধ করেছি। কিন্তু লোকজন হাইওয়ে এড়িয়ে নানা পথে এলাকায় ঢুকে পড়ছে। যারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসছে আমরা তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকাটা বাধ্যতামূলক করছি। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।'

সম্প্রতি গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে আমিনুর ও সূর্যবানু নামে এক দম্পতি আসেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমনগর গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী পালিয়ে এসেছে। আমিনুরের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, তারা চন্দ্রা থেকে একটি ট্রাকে করে বগুড়া পর্যন্ত আসেন। সেখান থেকে ভ্যানে করে রংপুর পর্যন্ত আসেন। রংপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সৈয়দপুর হয়ে নীলফামারী

আসেন। ২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়ির কাছাকাছি আসতে তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা লেগে যায়। কিন্তু গ্রামে এসেও বাড়িতে ঢোকার সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে সারাদিন ভুট্টাখেতে পালিয়ে থেকে রাত ১০টায় বাড়িতে ঢোকেন।

আমিনুর বলেন, 'চন্দ্রায় আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। আমার স্ত্রী গার্মেন্টে কাজ করতো। কাজকর্ম নেই। ওখানে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকার মতো অবস্থা নেই। আর চারদিকে করোনার গুজবের কারণে আমরা গ্রামে চলে আসি। কিন্তু গ্রামে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে আমরা সারাদিন ভুট্টাখেতে পালিয়েছিলাম। রাতে বাসায় ঢুকি।' আমিনুরের পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি আসার পর তাকে একটি ঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের ঘর থেকে বের হওয়া বা কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া হচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে একটি ট্রাকের ওপর ত্রিপল টানিয়ে একই এলাকায় আসেন আরও ১৮ জন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় চেয়ারম্যান ঢাকা-গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে তালা মেরে দিয়েছেন। গাজীপুর থেকে আসা কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, তারা দুই ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই সন্তান মিলে ছয় জন এসেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তায় তারা একটি সোয়েটার কারখানায় কাজ করতেন। সোয়েটার কারখানায় উৎপাদনের হারে বেতন হয়। এখন কারখানা বন্ধ, তাই গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছেন। আনোয়ার হোসেন বলেন, 'ওখানে থাকলে আমাদের ঘর ভাড়া দিতে হয়। খাবার খরচ আছে। বসে বসে খাওয়ার টাকা তো আমাদের নেই। তাই ঝুঁকি নিয়েই গ্রামের বাড়িতে চলে আসছি। এলাকার চেয়ারম্যান বাড়িতে তালা মেরে দিয়ে গেছে। আমরা ১৪ দিন ঘর থেকে বের হব না।'

বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কেএম কুতুব উদ্দিন বলেন, 'আমাদের এখানে গাজীপুর থেকে আরও কিছু লোকজন এসেছে। আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে লাল পতাকা ও লিফলেটের পাশাপাশি তালা মেরে বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া উপজেলার সীমানাগুলোতেও পাহারা বসানো হয়েছে। যাতে অন্য উপজেলার লোকজন আমাদের উপজেলায় না আসতে পারে।'

বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, 'আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার পরও লোকজন চলে আসছে। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে ঢাকা-গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করছি। যারা কথা শুনতে চান না তাদের ক্ষেত্রে বাসায় তালা মেরে রাখছি। আমাদের আসলে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।'

আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ৩৬ জন করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনো কঠোর ব্যবস্থা নিলে রংপুর বিভাগকে করোনার ভয়াল থাবা থেকে কিছুটা মুক্ত রাখা যেতে পারে। এজন্য প্রধান কাজই হলো ডেঞ্জার জোন হিসেবে পরিচিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে লোকজনের গ্রামে আসা বন্ধ করতে হবে।

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপস্নব কুমার সরকার বলেন, 'আমরা মহাসড়কগুলোতে ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট দিয়ে রেখেছি। কিন্তু এরপরেও প্রতিদিনই লোকজন আসছে। তারা চেকপোস্টের আগেই যানবাহন থেকে নেমে খেত-খামার দিয়ে চলে যায়। মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে লোকজনকে শতভাগ চলাচল বন্ধ করা সম্ভব না।'

তিনি বলেন, 'এছাড়া কেউ যখন এসে পড়ে তখন আর তাকে ঢাকায় ফেরানোও সম্ভব না। আমরা তাদের বুঝিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<96673 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1