দেশীয় স্টার্টআপদের দুঃসময়, ক্ষতির আশঙ্কা ৪৫০ কোটি

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনা পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দুঃসময় পার করছে দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো। অর্থনৈতিক স্থবিরতায় ব্যবসায়িকভাবে টিকে থাকা এবং নতুন বিনিয়োগ অর্জন নিয়ে ইতোমধ্যে কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে উদ্যোক্তাদের। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। ২০১৪ সালে অনলাইনে দূরপালস্নার গণপরিবহণের টিকিট সেবা দিয়ে যাত্রা শুরু করে সহজ ডট কম। এরপর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে সহজ একে একে চালু করে রাইড শেয়ারিং এবং ফুড ডেলিভারি সেবা। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হিসেবে অন্যতম শীর্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আসা সহজও আছে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতে। সহজের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মালিহা কাদির বলেন, এই সময়টা সত্যিই আমাদের সবার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। করোনার মতো এমন পরিস্থিতি নজিরবিহীন। বলতে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এমন সময় টিকে থাকাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সহজের বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) আছে বলে আমরা ভালো থাকতে পারব। কিন্তু যাদের বড় ভিসির ব্যাকিং নেই সেই স্টার্টআপগুলো সমস্যায় পড়বে। বিনিয়োগকারীদের একটি 'ট্র্যাকশন গ্রোথ' দেখাতে হয় স্টার্টআপদের। এর ওপর অনেকখানি নির্ভর করে পরবর্তী বিনিয়োগ। এই পরিস্থিতিতে পুনঃ বিনিয়োগ আশঙ্কায় পড়ছে কি না; এমন প্রশ্নের জবাবে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমাদের \হনির্দিষ্ট কিছু 'টার্মস' বা 'ডিল' থাকে। এর ওপর বিনিয়োগ অনেকখানি নির্ভর করে। তবে এই পরিস্থিতির কারণে যারা নতুন করে বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করবে তারা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অনেক কঠিন শর্তের মুখে পড়বে। যারা বড় বিনিয়োগকারী তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা হয়তো শিথিল থাকতে পারে। কিন্তু মাঝারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন বিনিয়োগ পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। আরেক দেশীয় আলোচিত স্টার্টআপ 'পাঠাও'- এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হুসেইন এম ইলিয়াস বলেন, করোনা বিভিন্ন খাতেই আঘাত হেনেছে। দেশীয় স্টার্টআপ ইন্ডাস্ট্রি তার বাইরে নয়। অথচ দেশীয় স্টার্টআপগুলো প্রযুক্তিগতভাবে সহজ করেছে লাখো মানুষের জীবনযাত্রা। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা লাখো তরুণের আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। এখন সেই 'আনসাং হিরো'দের সহায়তা দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সরকারের সহায়তা দরকার। এদিকে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় ও সেবা গ্রহণ বন্ধ থাকার কারণে দেশের প্রায় ৩০০ স্টার্টআপের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব)। সংগঠনটির সভাপতি শামীম আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ভিশন দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা যে ভিশন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেন, সেই ভিশনে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা তাদের স্বল্প পুঁজি, বাবা-মায়ের পেনশনের টাকা এবং কিছু এঞ্জেল বিনিয়োগকারী ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের বিনিয়োগকৃত অর্থ নিয়ে তাদের উদ্ভাবনী চিন্তাকে ব্যবসায় রূপ দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত ১২ বছরে এই উদ্যোক্তাদের রক্ত, ঘাম ও ত্যাগের ফলে এবং সরকারের নীতিমালার সহায়তায় আমাদের দেশে অনেকগুলো উদ্ভাবনী স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আমরা যে স্টার্টআপ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলেছি তা চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সরকারের প্রণোদনা ও সহায়তা ছাড়া গত ১২ বছরে আমাদের উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং সরকার কর্তৃক স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে যে বিপুল পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার সবই বিফলে যাবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাবে। তিনি আরও বলেন, অনুদান ও সহজ শর্তের ঋণের পাশাপাশি স্টার্টআপের আয় চলমান রাখতে সরকার তার নিজস্ব পণ্য ও সেবা ক্রয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে, যা সিঙ্গাপুর করেছে। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই স্মার্টআপের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা নিয়েছে সেগুলোর প্রাপ্য অর্থ প্রয়োজন হলে চুক্তি সংশোধনের মাধ্যমে দ্রম্নত পরিশোধ করা উচিত, যাতে স্টার্টআপগুলো তার কর্মীদের বেতন দিতে পারে এবং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। লকডাউনের সময়ে রিমোট কাজের টুল ব্যবহার করে স্টার্টআপগুলোকেও সক্রিয় থাকতে হবে, যাতে আয়ের প্রবাহ যতটা সম্ভব ধরে রাখা যায়। বিগত ৬ মাসে কর্মীদের দেওয়া বেতনের অঙ্কের ওপর ভিত্তি করে ১ শতাংশ হারে সহজ শর্তে ৫ বছরের জন্য ঋণসহায়তার প্রস্তাব করেছেন পাঠাও সিইও হুসেইন এম ইলিয়াস। ঋণ বা অনুদান সাহায্যের বাইরেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের কর মওকুফ সেবা চান উদ্যোক্তারা। সহজের এমডি মালিহা কাদির বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং সোর্সিং ভ্যাটের মতো কর দিতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের এবং কর্মীদের আয়কর দিতে হচ্ছে। সংকটময় এই সময়ে সবধরনের কর আমাদের জন্য মওকুফ করতে পারে সরকার। স্টার্টআপদের সহায়তায় বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, স্টার্টআপদের সহায়তার বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তিনটি বিষয়কে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রথমত, এই সময়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোন কোন সেবা বা পস্ন্যাটফর্ম টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, করোনা পরবর্তী প্রেক্ষাপটে কোন কোন নতুন ধরনের ব্যবসা বা সেবার দিক তৈরি হবে যাদেরকে একটু সহায়তা দিলে তারা বড় হবে সেগুলো আমরা এখনই দেখছি। এ নিয়ে আমাদের এলআইসিটি প্রকল্প কাজ করছে। তৃতীয়ত, যেসব স্টার্টআপ একটা অবস্থানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে ধাক্কা খেয়েছে তারা যেন পড়ে না যায়; তাদেরকে ধরে রাখার জন্য আমাদের সহায়তা থাকবে। আর সহায়তা বলতে শুধু আর্থিক না বরং আরও সাহায্য যেমন নীতিগত, কো-ওয়ার্কিং স্পেস দেওয়া, হ্যান্ড হোল্ডিং প্যাট্রোনাইজ করা- এসব সহায়তা দেব।