গবেষণা প্রতিবেদন

করোনায় দেশে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বাড়ছে

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমানহারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি সাধারণ জনগণ, পেশাদার ও সম্মুখ সারির সেবাদানকারী ব্যক্তি এবং অন্যান্য রোগাক্রান্ত মানুষের মাঝে এক ধরনের আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) রংপুর ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির এক যৌথ সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শ্যামলীর খিলজি রোডে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠান দুটির গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল করোনাভাইরাসকালীন সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের বিভিন্ন স্তর অনুসন্ধান করা। যেটি করতে গিয়ে দেখা গেছে ক্রমবর্ধমান লকডাউনের ফলে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার মধ্যে অনিদ্রা, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। তবে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় সংখ্যাতাত্ত্বিক উপস্থাপন ও নির্দিষ্টকরণ করে এই গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে। এ গবেষণাটি অনলাইন পস্নাটফর্ম ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি ক্রস সেকশনাল সমীক্ষা পরিচালনা করে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট' ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির 'স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ বিভাগের উদ্যোগে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংমিশ্রিত এবং স্বপ্রণোদিত অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। যেখানে ১০ হাজার ৯০০ জন উত্তরদাতার মধ্যে ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতা প্রশ্নপত্র যথাযথভাবে সম্পন্ন করে। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যে ১০ হাজার ৬৬০ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষ ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ, মহিলা ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য ০ দশমিক ৫ শতাংশ। ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছর এবং ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা পূর্ণকালীন বা খন্ডকালীন কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। বেশিরভাগ উত্তরদাতা (৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ) শতাংশ ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৮০ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারের সঙ্গে থাকছেন এবং তাদের মতে সংকটকালে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার কারণে তারা কিছুটা হলেও স্বস্তিবোধ করছেন। এছাড়া উত্তরদাতাদের মধ্যে ১ হাজার ১৮৫ জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে তারা ইতোমধ্যে কোভিড ১৯ পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন এবং এরমধ্যে ২৯ দশমিক ২০ শতাংশ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা উলেস্নখ করেছেন। এ গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, উত্তরদাতাদের ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ এ মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা অনিদ্রায় ভুগছেন, ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ মহামারি পরিস্থিতিতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এবং ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা উলেস্নখ করেন। ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতার মতে এ মহামারি পরিস্থিতিতে সামগ্রিকভাবে তারা আতঙ্কিত এবং বেশিরভাগ (৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ) উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। উলেস্নখ্য, অনিদ্রা, বিরক্তি, বিমলতা, উদ্বিগ্ন অবস্থা, নেতিবাচক চিন্তা আতঙ্ক এবং উত্তরদাতাদের হতাশা থেকে সহজেই দাবি করা যায় যে করোনাভাইরাস মহামারি দেশের মানুষের মানসিক অবস্থার উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এ গবেষণার চিফ ইনভেস্টিগেটর ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউলস্নাহ (বিএনসিসিও), সহযোগী ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর আবির ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. কিংসলে এগো, সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন যথাক্রমে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেওয়ান মুহাম্মদ নূর-এ ইয়াজদানি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ত্বহা হুসাইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের এমফিল রিসার্চ ফেলো মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।