বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের অবরোধ, অগ্নিসংযোগ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন -যাযাদি
বকেয়া বেতন-ভাতা, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন চলছেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিনই শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। বৃহস্পতিবারও গাজীপুর, আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকরা এবং কুমিলস্নার চান্দিনায় জুট মিল শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ করেছেন। আমাদের গাজীপুর সদর প্রতিনিধি জানান, টঙ্গীতে বেতন, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিক্ষোভ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর বিসিক এলাকার পেট্রিয়ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত দুইদিন ধরে মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে কর্মবিরতি ও আন্দোলন করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে কারখানায় গিয়ে শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য লে-অফ'র নোটিশ দেখতে পেয়ে আবারও বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পাশের রেডিসন, হামিম গ্রম্নপের পোশাক কারখানাসহ কয়েকটি কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের বেরিয়ে আসতে বলে এবং তাদের আন্দোলনে যোগ দিতে বলে। পরে তারা বিচ্ছিন্নভাবে টঙ্গী রেলস্টেশন, রেলওভার ব্রিজ ও পিনাকি কারখানার সামনে জড়ো হয়। পরে তারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভাগ কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলের সামনে এবং অপরভাগ স্টেশনরোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ এবং কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। একপর্যায়ে তারা একটি স্টেশন রোড এলাকায় হামিম গ্রম্নপের একটি কভার্ডভ্যানে এবং চেরাগ আলী এলাকায় (কাদেরিয়ায় টেক্সটাইলের সামনে) অপর একটি কভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া গাজীপুর মহানগরীর কুনিয়া এলাকায় লিবাস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে মালিক বিনা নোটিশে শ্রীপুর এলাকায় কারখানা স্থানান্তর করছে। মেশিন-মালপত্রও সরানো হচ্ছে। এ খবর পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। টঙ্গী ফায়ার স্টেশন কর্মী এবং পুলিশ গিয়ে গাড়ির আগুন নেভান এবং বেলা পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের স্টেশনরোড এলাকার মহাসড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার থোয়াই অং প্রম্ন মারমা জানান, দুপুর ১টার দিকেও চেরাগ আলী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করেছিল শ্রমিকরা। পরে পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এদিকে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। একই সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালান। পরে পুলিশ কারখানার ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে নরসিংহপুর এলাকার মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেডের কয়েক হাজার শ্রমিক কর্তৃপক্ষের কাছে মুঠোফোনের বিকাশ নম্বরে এপ্রিল মাসের বেতন না পাওয়ার যথাযথ উত্তর না পেয়ে একযোগে কাজ বন্ধ করে দেন। তারা কারখানার মূল ভবন থেকে বের হয়ে মূল ফটকে তালা মেরে সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ফটক কেটে ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে তারা চলে যান। কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যন্ত্রের সাহায্যে ফটক কেটে পুলিশ ভেতরে ঢুকে কাঁদানে গ্যাস ও গরম পানি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত মাসের বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন। পরে ফটক কেটে ভেতরে ঢুকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। জুট মিল শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ আমাদের চান্দিনা (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সতর্কতা উপেক্ষা করে বকেয়া বেতনের দাবিতে কুমিলস্নার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ করেছে জুট মিল শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে নূরীতলা এলাকায় আশা জুট মিলের শ্রমিকরা মহাসড়কে টিনের বেড়া দিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ারে অগ্নি সংযোগ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ৬ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর সকাল ১১টায় মিল কর্তৃপক্ষ আগামী সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রম্নতি দিলে পুলিশের সহায়তায় অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা। মিলের শ্রমিক আবু কালাম জানান, 'এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে আজ এক দেড় মাস কাজ-কর্ম নাই। আমরা যতটুকু করি তাও যদি বেতন না পাই, তাহলে পরিবারের লালন-পালন করব ক্যামনে। আজ ২ সপ্তাহ যাবৎ আমাদের বেতন দেয় না।' ওই জুট মিলের সিবিএ নেতা সুজন মুন্সি জানান, শ্রমিকদের মোট ১০ দিনের বেতন বকেয়া পড়েছে। এ নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলাপও করেছেন। কিন্তু কিছু বহিরাগত উচ্ছৃঙ্খল মানুষের পরোচনায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে আশা জুট মিলের ম্যানেজার (এডমিন) মো. জালাল-এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।