পুরানো আবহে পুরান ঢাকা

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি
পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা দোকান খুলতে শুরু করেছে। রাস্তায় বেড়েছে মানুষের চলাচল। কোথাও কোথাও সেই আগের মতো যানজট তৈরি হচ্ছে। সবমিলিয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও পুরানো আবহে ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর পুরান ঢাকা। সারাদেশে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার সুযোগ দেওয়ার পর থেকে পুরান ঢাকার টিকাটুলি থেকে শুরু করে ওয়ারী, নবাবপুর রোড, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, মৌলভীবাজার, চকবাজার, উর্দূ রোড, ইসলামপুরের চিত্র মোটামুটি এমনই। টিকাটুলি এবং ওয়ারীতে পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্সসহ অন্যান্য পণ্যের দোকান খুলেছে। নবাবপুর রোড এলাকায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও পণ্য ওঠানো-নামানো ও সরবরাহ করতে দেখা গেছে। নাজিমুদ্দিন রোডে আসবাব ও অন্যান্য দোকান খোলা ছিল। মৌলভীবাজারে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য পণ্যের বেচাকেনা চলতে দেখা গেছে। চকবাজারে পস্নাস্টিক, খেলনা, গয়না ইত্যাদি মনিহারি পণ্যের দোকান খুলেছে। উর্দু রোডে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী পাইকারি পোশাকের দোকানে কেনাবেচা চলছে। ইসলামপুর পাইকারি পোশাক ও বস্ত্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বেচাকেনা করছে। তবে যেটা খুব বেশি দেখা যায়নি, সেটা হলো স্বাস্থ্য সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ছোট ছোট দোকানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন ছিল। তবে বেশিরভাগ দোকানে ক্রেতা কম থাকায় ভিড় দেখা যায়নি। প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যারা পুরান ঢাকায় শাখা খুলেছে তারা অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও একই সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। ওইসব দোকানে ঢোকার মুখে হাতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়া, বিস্নচিং পাউডার গোলানো পানিতে জুতা পরিষ্কার করে প্রবেশ, তাপমাত্রা মাপা এবং মাস্ক পরার চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু ছোট দোকান ও পাইকারি মার্কেট এসব ব্যবস্থা দেখা যায়নি। কর্মী ও ক্রেতাদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে সেগুলোতে। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল, তবে অনেকের তাও ছিল না। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, তারা সমিতির সভা করে নানা সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া এবং তা মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। উর্দু রোড অভ্যন্তরীণ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মানিক বলেন, আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তদারকির জন্য ছয়টি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে কেনাকাটার জন্য ওয়ারীতে সবচেয়ে ভালো জায়গা রেংকিং স্ট্রিট। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সব শাখায় খোলা রয়েছে। স্থানীয় পোশাক, জুতা, প্রসাধন ও অন্যান্য পণ্যের দোকান খোলা। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা চলছে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে। তবে দোকানগুলোতে ক্রেতা ছিল দুই-একজন করে। ওয়ারীতে ইসরাত ফ্যাশন নামের একটি পোশাকের দোকানে একা বসে ছিলেন বিক্রেতা মোহাম্মদ আমীর হোসেন। বললেন, বেচাকেনার অবস্থা মোটেও ভালো নয়। ওয়ারীর তুলনায় চকবাজার, উর্দু রোড ও ইসলামপুরের মানুষের চলাচল অনেক বেশি। চকবাজার যাওয়ার জন্য নাজিমুদ্দিন রোডের শুরুতেই যানজট দেখা গেছে। নবাবপুর রোডে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। কিন্তু রাস্তায় পণ্য ওঠানো-নামানো ও সরবরাহের কাজ পুরোদমে চলছে। বিক্রেতারা জানান, এসব বেচাকেনা হচ্ছে ফোনে ফোনে। বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্রেতারা ফোনেই অর্ডার করছেন। নবাবপুর রোডের ইলেকট্রিক মার্কেটের একটি দোকানের কর্মী মো. সজল বলেন, বৈদু্যতিক পণ্যের চাহিদা মোটামুটি ভালো। খুচরা দোকান মালিকরা এখন ফোনে সরবরাহ আদেশ দিচ্ছেন এবং সেভাবেই পণ্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবাজারে শুভ গার্মেন্টের মালিক নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, গুদাম থেকে দেড় লাখ টাকার পোশাক পাইকারি বিক্রি করা হয়েছে। ঈদের আগে যদিও আরও কিছু দিন এমন বেচাকেনা হয়, তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। ইসলামপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, আমরা মোটামুটি বিক্রি করছি। ইসলামপুরের সব কর্মচারী বেতন-ভাতা পাবেন। তবে যারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের তো বেতন দেওয়ার ঠেকা নেই। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। দোকানপাট বন্ধ ছিল। ৪৫ দিন পর তা সীমিত পর্যায়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। যদিও ঢাকার বড় বড় শপিংমল খোলেনি, বড় রাস্তার পাশের দোকান খুলেছে। তবে সব জায়গাতেই ক্রেতাদের উপস্থিতি কম।