চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী বনাম আসামির নির্দোষিতা

আপনি চেকের মামলায় এভাবে সাফাই দিতে পারেন যে, বাদী আমার পরিচিত/বন্ধু/সহকর্মী/ব্যবসায়ী পার্টনার/সু সম্পর্ক। এবার লেনেদেন ও চেক দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি তার দোকান থেকে কিছু মালামাল বাকিতে ক্রয় করি। বাদী সিকিউরিটি হিসেবে আমার স্বাক্ষরিত একটি বস্ন্যাংক চেক নেয়। পরবর্তী সময়ে আমি দেনার টাকা পরিশোধ করে দেই। বাদীর কাছে আমার স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে সে আমাকে বলে পরে দেবে। কিন্তু সে ওই চেক আর ফেরত দেয়নি। আমি পরবর্তী সময়ে অন্য দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করায় বাদী রাগান্বিত ও আমার ওপর মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ওই চেকে টাকার অংক ও তারিখ বসিয়ে চেক ডিজঅনার করে এই মামলা করেছে। আমার কাছে বাদীর কোনো টাকা পাওনা নেই। আমার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী আসামিকে সুরক্ষা দেয় যদি তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আসামি কেন নির্দোষ, কীভাবে তাকে মিথ্যাভাবে জড়িত করা হয়েছে, কেন বা কীভাবে সে ঘটনার শিকার হয়েছে, চেকটি কেন বাদীর হস্তগত হয়েছিল সে মর্মে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে পারলে আসামির খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি চেকের মামলায় এভাবে সাফাই দিতে পারেন যে, বাদী আমার পরিচিত/ বন্ধু/সহকর্মী/ব্যবসায়ী পার্টনার/ সু সম্পর্ক। এবার লেনেদেন ও চেক দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি তার দোকান থেকে কিছু মালামাল বাকিতে ক্রয় করি। বাদী সিকিউরিটি হিসেবে আমার স্বাক্ষরিত একটি বস্ন্যাংক চেক নেয়। পরবর্তী সময়ে আমি দেনার টাকা পরিশোধ করে দেই। বাদীর কাছে আমার স্বাক্ষরিত চেক ফেরত চাইলে সে আমাকে বলে পরে দেবে। কিন্তু সে ওই চেক আর ফেরত দেয়নি। আমি পরবর্তী সময়ে অন্য দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করায় বাদী রাগান্বিত ও আমার ওপর মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ওই চেকে টাকার অংক ও তারিখ বসিয়ে চেক ডিজঅনার করে এই মামলা করেছে। আমার কাছে বাদীর কোনো টাকা পাওনা নেই। আমার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। আসামি পরীক্ষা বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারাতে বলা আছে সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত তার বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। একটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি- যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)। ৩৪২ ধারার বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে মামলা খালাস কিংবা সাজা কমানোর অনেক নজির আছে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মামলার রায়ে। ৩৪২ ধারায় আসামির বয়স ৯০ বছর উলেস্নখ থাকায় তার সাজা মানবিক দিকে বিবেচনা করে জেল কমিয়ে যতদিন হাজতে ছিল তত দিন করে দিয়েছেন। হাসান আলী বনাম রাষ্ট্র, ১৫ বিএলডি (এডি) পৃষ্ঠা-৩৭। অপর এক মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে দঃ বিঃ ৪২০ ধারায় দন্ডাদেশ দিলে আসামি সেই দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করলে আপিল আদালত তাকে খালাস দেয়। ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বাদী হাইকোর্টে আপিল দায়ের করে। আপিল শুনানি শেষে হইকোর্ট ডিভিশন আপিল নামঞ্জুর করেন এবং নিম্ন আপিল আদালতের রায় বহাল রখেন। হাইকোর্ট ডিভিশন রায়ে উলেস্নখ করেন যে, নিম্ন আপিল আদালত ৩৪২ ধারায় দেয়া আসামির বিবৃতি যেখানে আসামি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও সাক্ষ্যের ব্যাখ্যা দিয়েছে- তা বিবেচনায় নিয়ে খালাস দিয়ে কোনো ভুল করেননি। ওই রায়ে আরো উলেস্নখ করা হয়েছে যে, ৩৪২ ধারার পরীক্ষা শুধু আসামি এবং আসামির উপকারের জন্য। (আব্দুল করিম বনাম শামসুল ইসলাম ৪৫ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৫৭৮)। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, আমাদের অধিকাংশের ৩৪২ ধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। অনেক আদালতও সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা করেন না। এটাকে শুধু ফরমালিটি মনে করে। এজন্য ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আসামিকে পরীক্ষার সময় শুধু জিজ্ঞাসা করে আসামি নির্দোষ দাবি করে কিনা এবং সাফাই সাক্ষী দেবে কিনা। এটা আদৌও আইন সম্মত নয়। এ ধারাতে বলা আছে, সাক্ষ্য হতে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য আদালত আসামিকে জিজ্ঞাসা করবেন। জিজ্ঞাসাকালে আসামি দাবি করতে পারে যে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখিত আকারে দেবে। তার এ লিখিত বক্তব্য আদালত বিচারে বিবেচনা করবে অর্থাৎ আদালত আর বিবেচনায় ন্যায়সঙ্গত মনে করলে অসামিকে খালাস দিতে পারবে। ৩৪২ ধারায় যেভাবে আসামিকে পরীক্ষা করার বিধান আছে তা পালন করা ম্যান্ডাটরি এবং এর ব্যতিক্রম বেআইনি। আর এ কারণেই আমাদের দেশের ভারতের এবং পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে ৩৪২ ধারার পরীক্ষা না করার কারণে অনেক মামলায় আসামিকে খালাস দিয়েছেন কিংবা সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য মামলা বিচারিক আদালতে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। একটা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে রায় প্রদান করেন যে, আসামিকে ৩৪২ ধারায় পরীক্ষার কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি- যা আইনের বরখেলাপ এবং তাতে আসামি প্রিজুডিসড হয়েছে। ওই মামলায় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে এবং খালাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে এ বিষয়টি অন্যতম। (সূত্র আবুল হোসেন বনাম রাষ্ট্র, ৪৬ ডিএলআর পৃষ্ঠা-৭৭)। লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ঊসধরষ: ংবৎধল.ঢ়ৎধসধহরশ@মসধরষ.পড়স