লেগুনা বিভ্রান্তি কাটছে না যাত্রী ভোগান্তি চরমে

কোথাও চলছে, কোথাও বন্ধ

শুক্রবার মিরপুর ২ নম্বর থেকে ৬০ ফুট রাস্তা দিয়ে আগারগঁাওয়ের বাংলাদেশ বেতার ভবন হয়ে ফামের্গট পযর্ন্ত, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ও গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে শ্যামলী, মোহাম্মদপুর বা একই সড়কে ধানমÐির জিগাতলা বাস স্টপেজ পযর্ন্ত লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীর সড়কে চলছে লেগুনা -যাযাদি
চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীতে লেগুনা চলাচল বন্ধের নিদের্শ দেয়। সে অনুসারে গত সপ্তাহ থেকে রাজধানীর মূল সড়কে লেগুনা চলাচল না করলেও কিছু কিছু এলাকায় এখনো লেগুনা চলতে দেখা যাচ্ছে। তবে সপ্তাহের ছুটির দিন বিশেষ করে শুক্রবার এসব লেগুনাকে মূল সড়কে চলাচল করতেও দেখা গেছে। এতে কমর্ দিবসে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। শুক্রবার মিরপুর ২ নম্বর থেকে ৬০ ফুট রাস্তা দিয়ে আগারগঁাওয়ের বাংলাদেশ বেতার ভবন হয়ে ফামের্গট পযর্ন্ত, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ও গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড় হয়ে শ্যামলী, মোহাম্মদপুর বা একই সড়কে ধানমÐির জিগাতলা বাস স্টপেজ পযর্ন্ত লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়। আরও জানা গেছে, সপ্তাহজুড়ে সন্ধ্যার পর এবং সপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মূল সড়কে চলাচল করে লেগুনা। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোটর্ অথরিটির (বিআরটিএ) অনুমোদন নিয়ে ১৫৯টি রুটে এসব ছোট আকারের যান চলাচল করত। বিআরটিএ প্রায় চার হাজার ৪৬৪টি লেগুনার নিবন্ধন দিলেও, ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লেগুনার সংখ্যা আরও বেশি। আর দীঘির্দন ধরে এসব লেগুনা রাজধানীতে চলাচল ও স্বল্প ভাড়ার কারণে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এ ছাড়াও রাজধানীবাসীও এই পরিবহনের ওপর অনেকটা নিভর্রশীল হয়ে পড়েছিল। কেননা রাজধানীর মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। অন্যদিকে, লেগুনার সঙ্গে সংযুক্ত শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের মতে, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে হুট করেই লেগুনা বন্ধ করে দেয়া একটি অমানবিক কাজ। এর ফলে যাত্রীরা বিপাকে পড়া ছাড়াও তারা বেকার হয়ে পড়ছেন। তবে লেগুনা সাভিের্সর ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম রয়েছে (যেমনÑ অপ্রাপ্তবয়স্ক বা লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে লেগুলা চালানো ও ফিটনেসবিহীন লেগুনা) সেগুলো সংশোধন করে বা আইনের সঠিক প্রয়োগ করে লেগুনা চালানো উচিত বলে মনে করেন যাত্রী-চালক সবাই। শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুরগামী লেগুনার যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শ্যামলী থেকে মোহাম্মদপুর পযর্ন্ত যদি প্রতিদিন রিকশায় যাওয়া-আসা করি তাহলে দিনপ্রতি আমার খরচ হবে ২০০ টাকা। সেখানে লেগুনায় শুধু ২০ টাকায় আমি গন্তব্যে যেতে পারছি। প্রতিদিন ২০০ টাকা খরচ করার মতো সামথর্্য আমার নেই। আর দূরত্বটা অনেক তাই হেঁটে যাওয়াও সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে লেগুনায় সবোর্ৎকৃষ্ট পরিবহন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর পযর্ন্ত বাসও চলে না। তাই লেগুনা বন্ধ করার আগে সরকারের অবশ্যই বিকল্প কোনো ব্যবস্থা চালু করা উচিত ছিল। যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে লেগুনা রাজধানীতে বেবিট্যাক্সি চলাচল যখন বন্ধ করা হয়েছিল তখন বিকল্প হিসেবে সিএনজিচালিত আটোরিকশা চালু করা হয়েছিল। সেরকম একটা কিছু করা দরকার।’ বিকল্প ব্যবস্থা চালু না করে লেগুনা বন্ধ করা ঠিক নয় মন্তব্য করে ফামের্গট টু মিরপুর ২ নম্বরগামী লেগুনার যাত্রী ফয়সাল রহমান বলেন, ‘শিক্ষাথীর্রা যখন আন্দোলন করেছিল তখন আমরা ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হেঁটে গিয়েছি। তাই বলে এটা সম্ভব না যে সারা বছর হেঁটে হেঁটে কাজে যাব।’ তিনি আরও বলেন, সড়কে বেশিরভাগ দুঘর্টনা ঘটে বাস ও প্রাইভেট কারে। সবর্ প্রথম তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। লেগুনাতে খুব বেশি দুঘর্টনার খবর দেখা যায় না। তারপর ওই যানবাহনটিকে বন্ধ করে দেয়া অনেকটা অযৌক্তিক। আবার আগারগঁাও থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় মেট্রোরেলের কারণে সব সময় যে পরিমাণ যানজট থাকে সেটা থেকে দূরে থাকতেও এ রুটে লেগুনা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোহাম্মদপুর থেকে ধানমÐির জিগাতলা রুটের লেগুনাচালক জিয়া বলেন, লেগুনা ছোট যানবাহন হলেও এর মালিকরা অনেক প্রভাবশালী। এজন্য রাস্তায় এখনো টুকটাক লেগুনা দেখা যায়। আর আগে ছোটদের দিয়ে লেগুনা চালানো হতো। এখন তা বন্ধ করা হয়েছে, এখন লাইসেন্সধারী চালক দিয়েই লেগুনা চালানো হচ্ছে। তবে হেলপার হয়তো কমবয়স্ক রয়েছে। ‘লেগুনা অনেক জনপ্রিয় একটি যানবাহন। এতে উপাজর্নও ভালো হয়। কিন্তু তা বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে আমাদের অনেক ভাইরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু কারও কারও ঢাকা ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। তাই আমাদের কথা চিন্তা করে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এটা বন্ধ করা ঠিক হবে না।’ এদিকে, রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় ভিন্ন মতামত পোষণ করেন মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রেজা।