বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত সব চিনিকলই বন্ধের আয়োজন চলছে: বাম জোট

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
১০ চিনিকল এলাকা সফর শেষে রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট -যাযাদি

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক আবদুলস্নাহ ক্বাফী বলেছেন, 'ছয়টি চিনিকল সরকার ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করেছে। কিন্তু আগামী মৌসুমে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সব চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্ত আয়োজনই সরকার করে চলেছে।'

বন্ধ ছয়টিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ১০টি চিনিকল এলাকা প্রতিনিধিদলের সফর শেষ করে রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।

গত ১০ ও ১২ জানুয়ারি নয় জেলায় দশটি চিনিকল ও আখ চাষ এলাকায় ঝটিকা সফরে যান বাম গণতান্ত্রিক জোটের আট প্রতিনিধি। সফরে চিনিকলগুলোর শ্রমিক, আখচাষি ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় ও পথসভা করা হয় বলে জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বাফী।

শ্রমিক ও আখচাষিদের উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, 'প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে পরবর্তী বছরের আখ চাষের জন্য চিনিকল থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও ঋণ দেওয়া হয়। এ বছর কোনো চিনিকল থেকেই আখচাষিদের সেই ঋণ ও প্রণোদনা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে কৃষকদের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করায় এ বছর আখ চাষে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে। আখের অপর্যাপ্ততার কারণে চিনিকলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবে।'

বাম জোটের সমন্বয়ক জানান, ১৫টি চিনিকলের মালিকানায় ১৯ হাজার ৯৬ একর জমি রয়েছে। চিনিকলগুলোয় বর্তমানে ৯ হাজার ১৬ জন কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ৭১৪ জন কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৪০১ জন কর্মচারী ও ৩ হাজার ৯০১ জন শ্রমিক রয়েছেন।

ক্বাফী বলেন, ১৯৩৩ সালে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ ও গোপালপুর চিনিকল দুটি ব্রিটিশ আমলে একই মালিক স্থাপন করেছিলেন। তখন একজন ব্যবস্থাপকই কারখানা চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। এখন প্রতিটি কারখানায় একজন এমডি, চারজন জিএম, ডজনখানেক ডিজিএমসহ বিশাল মাথাভারী প্রশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চিনিকলগুলোতে। মাসে শ্রমিকদের মজুরি যা দেওয়া হয় তার তিন-চারগুণ বেশি বেতন দিতে হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষিদের থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এক কেজি আখের উৎপাদন ব্যয় ৬ দশমিক ৬১ টাকা, আর কৃষক সেটা চিনিকলের কাছে বিক্রি করে ৩ দশমিক ৫০ টাকা। সরকার যে চিনিকলের লোকসানের কথা বলে তা কী আদৌ সত্য? আর লোকসান হলেও দায় কার?

বাম জোটের সমন্বয়ক বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর সংকটের বড় কারণ হলো চিনির উৎপাদন খরচ আমদানি করা চিনির বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি। এই উৎপাদন ব্যয়ের একটা বড় অংশ আবার ঋণের সুদ।

চিনির উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় একর প্রতি আখের ফলন কম, পুরাতন প্রযুক্তি ও মেশিনের কারণে আখ থেকে চিনি আহরণ হার (রিকভারি রেট) কম, প্রতিযোগিতামূলক না হওয়া, আখ কেনা থেকে চিনি উৎপাদন ও বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ব্যাংক ঋণ ও অপ্রয়োজনীয় জনবলের বেতনভাতা পরিশোধ।

চিনি শিল্প রক্ষায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বাম জোটের সমন্বয়ক ক্বাফী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল বন্ধ না করে ভুলনীতি ও দুর্নীতি দূর করে আধুনিকায়ন করে কারখানা চালু করতে হবে। লোকসানের জন্য দায়ী নীতিনির্ধারক, দুর্নীতিবাজ আমলাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি, কৃষকদের আখের বকেয়া মূল্য পরিশোধ, উন্নত জাতের আখ উদ্ভাবনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়ানো এবং আখচাষিদের ন্যায্যমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক সময়মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণতান্ত্রিক বিপস্নবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে