শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা

করোনায় ক্যাম্পাস ছাড়েননি তারা তবুও পাননি বার্ষিক বোনাস

জবি প্রতিনিধি
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

'চাকরি ছোট কিন্তু আমাদের দায়িত্ব বড়। প্রথম লকডাউনে ক্যাম্পাসে কিছু মানুষ ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে আমাদের কামাল ড্রাইভার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে রাতারাতি ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে যায়। সেই আতঙ্কের কথা অনুভব করা যায় না। কারণ কামাল ভাই ক্যাম্পাসে থাকত আর সবসময় আমাদের সঙ্গেই আড্ডা দিত। সবাই চলে গিয়েছিল। চলে যাওয়ার জন্য বাপ-মাও কান্নাকাটি করেছে। কিন্তু দায়িত্বের কারণে যেতে পারিনি। অথচ আমাদেরও পরিবার-পরিজন আছে। এগুলো কেউ বোঝে না। চাকরি ছোট হলেও দায়বদ্ধতার কারণে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে পারিনি', এভাবেই লকডাউনে করোনার পরিস্থিতি তুলে ধরেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা।

তারা আরও বলেন, 'শুধু নিরাপত্তা না, ক্যাম্পাস পয়-পরিষ্কার করা, ঝাড়ু দেওয়া, ক্যাম্পাসে ওষুধ স্প্রে করে রোগ জীবাণুমুক্ত করার কাজও আমাদের করতে হয়েছে। কারণ ওই সময় সুইপাররাও ভয়ে ক্যাম্পাসে আসত না।'

মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষশূন্য পরিবেশে ক্যাম্পাসে দেখা দেয় নিরাপত্তাহীনতা। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ নিরাপত্তাকর্মী। স্থায়ী ও হাজিরাভিত্তিক এসব কর্মী করোনা আক্রান্তের কথা চিন্তা না করে সর্বদা সজাগ থেকেছেন ক্যাম্পাস নিরাপত্তায়। ওই সময় তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তারা।

হাজিরাভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, 'ক্যাম্পাসে যখন করোনার আতঙ্ক তখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহারা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন হয়নি। কোনো ঝুঁকি ভাতাও পাইনি। এমনকি প্রত্যেক কোরবানি ঈদে যে বাৎসরিক বোনাস পাই সেটাও পাইনি। আমরা আবেদন করেছি কিন্তু প্রশাসন থেকে আজ না কাল করছে। ওই সময় সবাই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এখন কেউ আমাদের কথা মনে রাখেনি।'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়ক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. আবু সাইদ বলেন, 'নিরাপত্তাকর্মীদের বার্ষিক বোনাস প্রাপ্তির বিষয়ে বেশ কয়েকবার অর্থ শাখার পরিচালক নাসির স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখনো বোনাসের টাকা পাওয়া যায়নি।'

নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, 'করোনার ভিতর ঝুঁকি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি রফিক ভবনে তাদের থাকার ব্যবস্থাসহ খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বার্ষিক বোনাসের বিষয়ে অর্থ ও হিসাব দপ্তর বলতে পারবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক কাজী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, এর প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের যে নির্দেশ দেবে আমরা সেটা করব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে